ইতিহাসের এই দিনে

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ইতিহাসের এই দিনে
শনিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৮



---

আজ (শনিবার) ০১লা ডিসেম্বর’২০১৮

(বিশ্ব এইডস দিবস)
মানব সভ্যতার ইতিহাসে এইডস একটি ভয়ংকর ঘাতক ব্যাধি। স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ এ ঘাতক ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্তম পন্থা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশ সরকার এইডস প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে চলছে বিভিন্ন প্রতিরোধ কার্যক্রম। ইতোমধ্যে জাতীয় এইডস নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বর্তমানে বিশ্বে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ মিলিয়নের অধিক। এ সংখ্যা স্থির নয়। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন গত ৫০ বছরে যুদ্ধে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যতো মানুষ মারা গেছে তার চেয়ে এই শতাব্দীতে বেশি মানুষ মারা যাবে এইডসে । বাংলাদেশে এইডসে এ পর্যন্ত ২০ জন মারা গেছে। ইউএন এইডস-এর ধারণা বাংলাদেশে এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ শরীরে এইডসের জীবাণু বহন করছে।

১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ঘাতক ব্যাধি এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সাধারণ অধিবেশনের এই আলোচনা অনুসরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৮-এর ১ ডিসেম্বরকে বিশ্ব এইডস দিবস ঘোষণা করে এবং ৪৩/১৫ সিদ্ধান্তে উক্ত দিবস পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। বিশ্বে এখন প্রায় ৫০ লাখ লোক এইচআইভি ও এইডস ব্যাধিতে আক্রান্ত । চিকিৎসা দ্বারা এ রোগের আরোগ্য নেই। প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এই রোগের ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব সভ্যতা বিপন্ন হবে। এ কারণেই এইডস শব্দটি বিশ্ববাসীকে করেছে আতংকগ্রস্ত। এ রোগ কিভাবে ছড়ায়, রোগটি প্রতিরোধে কী করণীয় এ সম্পর্কে সতর্ক হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। বিশ্ববাসীকে সতর্ক করা, জাগিয়ে তোলা, এইডস প্রতিরোধে জনমত গড়ে তোলা, এইডস এর বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা-এসব লক্ষ্য নিয়ে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর পালিত হয় বিশ্ব এইডস দিবস। হিসাবে বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৮৫০০ মানুষ এইডস ভাইরাস (এইচআইভি বা হিউম্যান ইমুনো ডেপিসিয়েসি ভাইরাস)-এ আক্রান্ত হচ্ছে এবং তার মধ্যে ১০০০ জন শিশু। আক্রান্ত মায়ের প্রতি তিন সন্তানের মধ্যে একজন এইডস এ আক্রান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে এইডস বিরোধী কার্যক্রম শুরু হয় জাতীয় এইডস কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৮ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল প্রোগ্রাম অন এইডস (এঅচ) এর সহায়তায় দেশে এইডস পরীক্ষার জন্য ৫টি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। জরীপ চালিয়ে দেখা যায় বাংলাদেশে এইডস ছড়ানোর সমস্ত উপকরণ বিদ্যমান। যেমন এইডস প্রধানত ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনের মাধ্যমে অর্থাৎ অবৈধ যৌন মিলনের মাধ্যমে। সমাজে অনুমোদনযোগ্য না হলেও পতিতাবৃত্তি এখানে প্রচলিত আছে বহুকাল ধরে। পেশাদার যৌনকর্মী ও তার খদেরদের মধ্যে যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। রক্ত ও রক্তপাত দ্রব্য পরিসঞ্চালন, অপরিশোধিত সিরিঞ্জ, সুঁচ, শল্য ও দন্ত চিকিৎসায় যন্ত্রপাতি এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত রেজর, ব্লেড ইত্যাদি দিয়ে এইচআইভি ছড়ায়। এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের সন্তান গর্ভকালীন সময় অথবা বুকের দুধ পানের মাধ্যমেও এইডস জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে ।

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এরূপ ধারণা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এইডস বিষয়ে নিম্ন প্রকোপ কিন্তু উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে এইডস ছড়ানোর আর একটি পথ হচ্ছে বিনা পরীক্ষায় রক্ত সঞ্চালন। বিশেষ করে এখানে রক্তদাতাদের ৭৫ জনই পেশাদার ।
বাংলাদেশে এইডসের প্রকোপ তুলনামূলক কম। কিন্তু পার্শ্ববতী দেশ থেকে ডিফিউশন পদ্ধতির ন্যায় বাংলাদেশেও এইডস এর মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে না তুললে বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হতে পারে কারণ এইডস কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীরই রোগ। এতে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মিত বাজেটের সহায়তায় এইডস প্রতিরোধের কাজ অব্যাহত আছে। ১৯৯৬ থেকে টঘউচ এর সহযোগিতায় এইডস প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গৃহীত হয়। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এনজিও উল্লিখিত প্রকল্পের আওতায় ঝুকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে। প্রণীত হয়েছে এইডস ও যৌনরোগ বিষয়ক নীতিমালা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার আওতায় প্রতি বছর বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। এই দিবসে সেমিনার, আলোচনা সভা, র‌্যালি, পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধে সচেতন করা হয় জনগণকে ।

(খান আতার মৃত্যু)
বরেণ্য ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের এ দিনে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চিরবিদায় নিয়েছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল এ মানুষটি। তিনি ছিলেন প্রতিভা-বৈচিত্র্যে ভরপুর এক কীর্তিমান পুরুষ। দেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লে তার অবদান অসামান্য। বিশেষ করে তার প্রতিভার উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রয়োগ আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে করেছে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল। চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের সাথে তার অঙ্গাঙ্গ সম্পর্ক ছিল আমৃত্যু। তার ব্যাপ্তি শুধু অভিনয় কিংবা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেই নয়, তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, সাংবাদিক, কলামিস্ট, সংবাদপাঠক সর্বোপরি প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাতা । এ দেশের চলচ্চিত্রের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধকতা, অপর্যাপ্ততা সত্ত্বেও মহীরূহের মতো এর উন্নয়নের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমান।
১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামে খান আতাউর রহমানের জন্ম। পিতা জিয়ারত হোসেন খান ছিলেন পুলিশ অফিসার। ছোটবেলায় আদর করে তাকে তারা মিয়া’ বলে ডাকতেন। পিতৃ-মাতৃ সূত্রে খান আতাউর রহমান শিল্পকলার সংস্পর্শে এসেছিলেন শৈশবেই। ১৯৩৭ সালে যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র, ঢাকা জেলা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় মন পবনের ডিঙ্গা বাইয়া বন্ধুর দেশে যাই গানটি গেয়ে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। এ গানের মাধ্যমে আসেন নাট্যাঙ্গনে। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যয়নের সময় স্ত্রী ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেছেন শৈশবেই । ১৯৪৪ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন খান আতাউর রহমান। তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রথম ব্যাচে ভর্তি হন। কিন্তু পড়াশোনা না করে সিনেমায় কাজ করার লোভে মায়ের বাক্স ভেঙে ৬০ টাকা চুরি করেন। এরপর ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বিএসসি’তে। পাশাপাশি সিনেমার ব্যাপারটি আমূল গেথে ছিল তার চৈতন্যে। লন্ডনে ফটােগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়া হয়নি। ১৯৪৯ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে খান বোম্বে। পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন। আর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন। রাত হলে ফুটপাতে ঘুমাতেন। ঘুরতে ঘুরতে জ্যোতি স্টুডিওর ক্যামেরাম্যান জাল ইরানীর সাথে পরিচয় । তিনি এ্যাপ্রেন্টিস হিসেবে কাজের সুযোগ দেন। পরের বছর চলে আসেন করাচি । রেডিও পাকিস্তানের বার্তা সম্পাদক তখন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, সংবাদ পাঠক ফতেহ লোহানী ও কাজী খালেক। তাদে সহযোগিতায় চাকরি পান রেডিওতে, সংবাদ পাঠকের দায়িত্ব পালন করেন । চাকরীর ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝেই ঢুঁ মারেন লাহরের সিনেমায় ঢোকার আশায় বিখ্যাত সারেঙ্গী বাদক জহুরী কানের কাছে সঙ্গীতের পদ্ধতিগত শিক্ষালাভ করেন। ১৯৫১ সালে রেডিওর চাকরি ছেড়ে দেন। এ সময় করাচিতে ইস্ট পাকিস্তান এসোসিয়েশনের উদ্বোধন উপলক্ষে নাট্যাভিনয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি পরিচালনা ও নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। নাটক থেকে সংগৃহীত অর্থ আর বাকি কিছু নিজের কষ্টার্জিত উপার্জন সম্বল করে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি জমান। সেখানে শুরু হয় খান আতাউর রহমানের ভবঘুরে জীবন। গচ্ছিত অর্থ দিয়ে এসএম সুলতানের আঁকা ছবি বন্ধুরা মিলে ঘাড়ে করে নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন এবং সেই ছবি বিক্রি করে কোনমতে জীবন ধারণ করতে থাকেন। পরে লায়ন্স কর্নার হোটেলে বাসন ধোয়ার কাজ নেন । ১৯৫৩ সালে ভর্তি হন সিটি লিটারারি ইন্সটিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে । এরপর লন্ডনস্থ পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে চলে যান হল্যান্ড। ১৯৫৫ সালে আবার ফিরে আসেন লন্ডনে। সেখানে সাউথ হেকনি ডে কলেজে অংক ও ইংরেজি পড়ানোর চাকরি নেন। তখন থেকেই জড়িত হয়ে পড়েন থিয়েটার কোম্পানিগুলোর সাথে । ক’দিন বিবিসি’র বার্তা বিভাগে কাজ করেছেন । ১৯৫৭ সালে কিস্তিতে মোটর সাইকেল কিনে ৩/৪ কিস্তি দেয়ার পর পাড়ার বন্ধু আলী ইমামকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেলেই সড়ক পথে লন্ডন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ঘুরে মরুভূমি পেরিয়ে সোজা করাচি। করাচিতে মোটর সাইকেল বিক্রি করে আবার ফিরে আসেন ঢাকায় ।
ঢাকা ফিরেই তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভারে চাকরি। পাশাপাশি রেডিওর গীতিকার, সুরকার, নাট্যশিল্পী, অনুষ্ঠান ঘোষক এবং আবৃত্তিকার। এক কথায় সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে সম্পৃক্ত হলেন ব্যাপকভাবে। ১৯৫৮ সালে ঢাকায় ছবি করতে আসেন এ, জে কারদার । ছবির নাম ‘জাগো হুয়া সাভেরা’। নায়ক হিসেবে এ ছবিতেই খান আতাউর রহমান আনিস নাম নিয়ে চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করলেন। জহির রায়হান ছিলেন এ ছবির সহকারী পরিচালক। এ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে বন্ধুত্ব জহির রায়হানের সাথে। ১৯৫৯ সালে এহতেশামের “এদেশ তোমার আমার ছবিতে আনিস নামে শুধু নায়ক হয়েই এলেন না, খান আতাউর রহমান নামে এলেন সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার হিসেবেও। ১৯৬০ সালে জহির রায়হানের সাথে লিটল সিনে সার্কেল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় বন্ধু ফজলে লোহানীর সাথে জড়িত হন অগত্যা সাহিত্য পত্রিকার সাথে । পরের বছর কখনো আসেনি’ ছবিতে খান আতা নায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন সুমিতা। সেই বছরই সালাহউদ্দিন পরিচালিত যে নদী মরুপথে ছবিতে নায়ক, একটি গানের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন।
১৯৬২ সালে জহির রায়হান ও কলিম শরাফী পরিচালিত ‘সোনার কাজল’ ছবিতে গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ওই বছর সালাউদ্দিন পরিচালিত সূর্যমান ছবিতেও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘কাচের দেয়াল’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি । পাশাপাশি সে ছবিতে গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পীও ছিলেন। ওই ছবিতে তার নিজ কণ্ঠে গাওয়া গান শ্যামল বরণ মেয়েটি ডাগর কালো আঁখিটি’ তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। ১৯৬৪ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক ওবায়দুল হক পরিচালিত ‘দুই দিগন্ত’ রহমান পরিচালিত উর্দু সংগম’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ওই বছরই খান আতা স্বাধীনভাবে আত্মপ্রকাশ করেন অনেক দিনের চেনা’ ছবির মধ্যদিয়ে। এ ছবিতে তিনি প্রযোজক, পরিচালক, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এর পর থেকেই চলচ্চিত্রাঙ্গনে শুরু হয় তার বর্ণাঢ্য বিচরণ। প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা,
গীতিকার, সুরকার , সঙ্গীত শিল্পী, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং আরো নানা পরিচয়ে তিনি উপহার দেন একের পর এক অসংখ্য ছবি ।

১৯৯০ সালের এ দিনে ইংলিশ চ্যানেলের ১৩২ ফুট নিচে কর্মীরা পাথর কেটে একটি গাড়ি চলাচলের মতো সুড়ঙ্গ করতে সক্ষম হয়। আর এটি কোনো সাধারণ সুড়ঙ্গ ছিলো না। এই সুড়ঙ্গ করার মাধ্যমে গ্রেট বৃটেনের সাথে ইউরোপের মূল ভূ-খন্ডের সাথে সরাসরি ভূমি পথে সংযোগ স্থাপিত হলো। ইউরোপের দীর্ঘ ইতিহাসে এমন ঘটনা আর আগে কখনো ঘটেনি। ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে তৈরি এই সুড়ঙ্গ পথকে চ্যানেল টানেল বা চুনেল বলা হয়। তবে এই সুড়ঙ্গ পথ খোড়ার কাজটি হাল আমলে শেষ হলেও এই সুড়ঙ্গ পথ খোড়ার ধারণা কিন্তু অনেক দিনের পুরানো। ১৮০২ সালে ফরাসি বীর নেপোলিয়ন বোটপার্টি এ জাতীয় সুড়ঙ্গ খোড়ার কথা বলেছিলেন। তবে এই সুড়ঙ্গ পথ খোড়ার জন্য যে প্রযুক্তি দরকার তা বিংশ শতকের আগে বিকশিত হয় নি। ১৯৮৬ সালে এই টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর পরের চার বছরে ১৩ হাজার কর্মী ৯৫ মাইল টানেল খনন করে।

১৯৯০ সালের ১ লা ডিসেম্বর কর্মীরা বৃটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রাথমিকভাবে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হলেও টানেলের চুড়ান্তকাজ শেষ হতে আরো চার বছর সময়ের প্রয়োজন ছিলো। ১৯৯৪ সালের ৬ই মে আনুষ্ঠানিক ভাবে টানেলের উদ্বোধন করা হয়। এই টানেল নির্মাণে ১৫০০ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল টানেল। বিশ্বের বৃহত্তম রেল টানেল হলো জাপানের সেইকান টানেল।

১৯৫৫ সালের এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা অঙ্গরাজ্যের মন্টেগোমারি শহরে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক অভাবিত আন্দোলনের সূচনা করেছিলো। সে সময় সাধারণভাবে বাসের পেছনে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আসন নির্ধারিত থাকত। কোনো শেতাঙ্গ নাগরিক যদি সেখানে বসতে চাইতো তবে আসন ছেড়ে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককের দাড়িয়ে থাকতে হতো। কিন্তু ১৯৫৫ সালের এ দিনে কৃষ্ণাঙ্গ নারী রোসা পার্ক এই আইন মানতে অস্বীকার করলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নেতৃত্ব এই ঘটনার পর দিন থেকে মন্টেগোমারির কৃষ্ণাঙ্গরা বাস বর্জন করতে শুরু করে। তাদের এই বর্জন এক বছরের বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকে। ১৯৫৬ সালের ১৩ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বাসের আসন ভাগ করে রাখার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করে। ২০ শে ডিসেম্বর মার্টিন লুথার কিং এই বাস বর্জন প্রত্যাহারের আহবান জানান। পরদিন বাস বর্জন প্রত্যাহার করা হয় এবং নতুন আইন অনুযায়ী বাসের আসন বর্ণ ভিত্তিক ভাগাভাগির সমাপ্তি ঘটে। যারা এ দিন প্রথম বাসে উঠেছিলেন তাদের মধ্যে রোজা পার্ক অন্যতম।

১৯৫৯ সালের এ দিনে একটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রে বসানো ক্যামেরা দিয়ে মহাশুন্য থেকে প্রথম পৃথিবীর রঙ্গিন ছবি তোলা হয়েছিলো। আমাদের সৌর জগতে প্রধান নক্ষত্র হলো সূর্য এবং সূর্যের দিক থেকে দেখলে পৃথিবীর অবস্থান তিন নম্বরে রয়েছে। আমাদের জানামতে, পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে বলে কোনো প্রমাণ আজো পাওয়া যায় নি। মহাকাশ থেকে তাকালে পৃথিবীকে নীল রঙের দেখা যায়। আর এর কারণটি হলো পৃথিবী নামের এই গ্রহের ৭১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে পানি। এই পানি না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের বিকাশ ঘটত না।

১৯২১ সালের এ দিনে ইরানের বিখ্যাত সংগ্রামী এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মীর্জা কুচাক খান জাঙ্গালী শাহাদত বরণ করেছিলেন। তার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো ইরানের তৎকালীন স্বৈর শাসক রেজা খান এবং বৃটিশ ও অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার। এই সংগ্রামী পুরুষ কৈশোরে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন শুরু করেন এবং জ্ঞান অর্জন করেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিনি ইরানের নাজুক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য একটি দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেন। ১৯১৯ সালে ইরান এবং বৃটেন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে ইরানের উপর বৃটেনের প্রচন্ড প্রভাব পড়ে। কুচাক খান জাঙ্গালী এই চুক্তিকে ইরানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এবং তার সংগ্রামের সূচনা হয়। প্রথম দিকে তিনি উল্লেখ যোগ্য বিজয় অর্জন করেন। কিন্তু শক্তিশালী সরকারের সাথে কয়েক দফা যুদ্ধের পর তার বাহিনী ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়। বৃটিশ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ষড়যন্ত্র এবং নিজ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে মদভেদের কারণে তার বাহিনীর অনেকেই গ্রেফতার হয় এবং শাহাতদ বরণ করেন। শেষ পর্যন্ত তার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর তাবুক অভিযান (৬৩১)
স্পেনের দখল থেকে পর্তুগালের স্বাধীনতা লাভ (১৬৪০)
স্পেনের কবলমুক্ত হয়ে সান ডেমিঙ্গো প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত (১৮২১)
বিজ্ঞানী ড. কুদরত-এ-খুদার জন্ম (১৯০০)
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক অনন্ত সিংয়ের জন্ম (১৯০৩)
আইসল্যান্ডের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ (১৯১৮)
ন্যান্সি এস্টরের ইংল্যান্ডের কমন্স সভায় প্রথম মহিলা সদস্য হিসেবে যোগদান (১৯১৯)
মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু (১৯৫৫)
খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের নেতা আবদুল জববার খন্দরের মৃত্যু (১৯৭৭)
বাংলাদেশে রঙিন টেলিভিশনের কার্যক্রম শুরু (১৯৮০)
বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত (১৯৮৮)
বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু (১৯৯০)
বাংলাদেশের গাইবান্ধায় যাকাতের কাপড়ের জন্যে হুড়োহুড়ি, পদদলিত হয়ে ৫০ জনের মৃত্যু (২০০২)

বাংলাদেশ সময়: ১১:৫১:৪৭   ২৭৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ