রক্ত দিয়ে একাই ২৪ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » রক্ত দিয়ে একাই ২৪ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন
মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮



--- একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সব মানুষকে কর্মজীবন থেকে অবসরে যেতে হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা জেমস হ্যারিসন অবসরে গেলেন ৮১ বছর বয়সে। তবে তার এই অবসর কর্মজীবন থেকে নয়, তিনি অবসরে গেলেন রক্তদান করা থেকে! অস্ট্রেলিয়ার রেডক্রস ব্লাড সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৬০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত রক্ত দান করেছেন জেমস। গত শুক্রবার রক্ত দান কর্মসূচি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরে গেলেন জেমস। এভাবে রক্তদান করে তিনি বাঁচিয়েছেন ২৪ লাখ শিশুর জীবন। এতো সংখ্যক শিশুর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে জেমসের ভূমিকার রহস্যটা একটু অন্যরকম। মূলত জেমসের রক্তে অদ্ভুত ধরনের রোগ প্রতিরোধী এন্টিবডি থাকায় সেটি দিয়ে এন্টি ডি নামের জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন তৈরি করতো অস্ট্রেলিয়ার ওষুধ প্রশাসন।

গর্ভবতী মায়েদের শরীরে যদি রেসাস নেগেটিভ রক্ত (আরএইচ নেগেটিভ) থাকে এবং গর্ভে থাকার শিশুর শরীরে যদি রেসাস পজেটিভ রক্ত (আরএইচ পজেটিভ) থাকে তাহলে ঐ সন্তানের মৃত্যু ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। মূলত মায়ের শরীরের রেসাস পজেটিভ রক্ত থেকে এমন এক ধরনের এন্টিবডি তৈরি হয় যা কিনা শিশুর শরীরের রক্তের কোষকে ধ্বংস করতে থাকে। এর ফলে শিশুর মস্তিষ্ক দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে শিশুকে বাঁচানোর কাজ করে জেমসের রক্ত দিয়ে তৈরি করা এন্টি ডি নামের ইনজেকশন।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে অন্যের দেয়া রক্তে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন জেমস। এরপর পূর্ণাঙ্গ বয়স হওয়ার পর থেকে নিয়মিত রক্ত দিতে শুরু করেন হ্যারি। কয়েক বছর পরই তার রক্তের এই মহামূল্যবান উপাদানটির বিষয়ে জানতে পারেন চিকিৎসকরা। এরপর থেকে সরাসরি কাউকে রক্ত দেয়ার বদলে রক্ত দিতেন ঐ বিশেষ ধরনের এন্টি ডি ইনজেকশন তৈরির উদ্দেশ্যে - যাতে করে আরো অধিক সংখ্যক শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। আর এজন্য তিনি প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিতেন।

চিকিত্সক ফলকেনমিরে বলেন জানিয়েছেন, জেমসের রক্ত অসাধারণ প্রকৃতির। অস্ট্রেলিয়াতে তৈরি হওয়া এন্টি ডি ইনজেকশনের প্রতিটা ব্যাচই তৈরি হয়েছে জেমস হ্যারিসনের রক্ত থেকে। অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি একশ জনের ১৭ জন নারীর ক্ষেত্রে এই ধরনের ঝুঁকি থাকে। এসব ক্ষেত্রে এন্টি ডি ইনজেকশনই একমাত্র ভরসা। জেমসের নিজের মেয়ের সন্তানকে বাঁচানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে তার রক্তে তৈরি হওয়া এন্টি ডি ইনজেকশন।

জেমসের শরীরে এই ধরনের রক্তের কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকরাও কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাদের ধারণা, ১৪ বছর বয়সে তিনি যখন রক্ত নিয়েছিলেন তখনই হয়তো তার রক্তের মধ্যে কোন বিশেষ পরিবর্তনে তার রক্ত এমন হয়েছে। এমন মহামূল্যবান রক্তের অধিকারী হয়েও জেমস থেকেছেন নির্লোভ। বিনামূল্যে তিনি মানুষের জীবন বাঁচিয়ে গিয়েছেন টানা ছয় দশক ধরে। এর জন্য তিনি কখনো কিছুই দাবি না করলেও রাষ্ট্র তাকে দিয়েছে বীরের মর্যাদা। অসংখ্য পদক আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন জেমস। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানের পদক ‘মেডাল অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’তে সম্মানিত হয়েছেন জেমস হ্যারিসন। বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে জেমস থেকে আর রক্ত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়াবাসীর প্রতি জেমস আহবান জানিয়েছেন, কারো রক্তে যদি এই ধরনের বিশেষ এন্টিবডি থাকে তাহলে তা যেন দেশের মানুষের কাজে লাগার সুযোগ পায়।-সিএনএন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৫:৫০   ২৬৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ