সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

বিমানবন্দরে আগুন, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বিমানবন্দরে আগুন, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫



বিমানবন্দরে আগুন, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পার হলেও এখনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত সিএনএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকরা। আগুনে কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজে লাগা আগুনের ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্গো ভিলেজের পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আর ধোঁয়া উঠছে না। ভবনের সামনে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি মোতায়েন রয়েছে এবং কয়েকজন কর্মী ভেতরে কাজ করছেন। পুরো এলাকা পুলিশ ও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তায় ঘেরা। কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

আরও দেখা যায়, ভবনের সামনে ফুটপাতে অবস্থান করছেন বিভিন্ন সিএনএফ এজেন্ট ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকালের তুলনায় আজ উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও তাদের মুখে হতাশা স্পষ্ট। তারা এখনো ভাবছেন, কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন এবং নতুন করে আগত শিপমেন্টগুলো কীভাবে নিরাপদে সরানো যাবে।

সিএনএফ এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা শুধু বর্তমান ক্ষতির কথা ভাবছে না, ভবিষ্যতেও এই আগুনের প্রভাব থাকবে। সরকার যদি আর্থিক সহায়তা দেয়, তাহলে হয়ত ব্যবসা স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারবেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে টেলি বাংলাদেশ নামের সিএনএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, ভারত ও চায়না থেকে আমরা গার্মেন্টস শিল্পের জন্য সুতা নিয়ে আসি। আগুনে আমাদের ৪৫টি শিপমেন্ট পুড়ে গেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর বেশিরভাগই স্যাম্পল ছিল। গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ এসব কাঁচামাল দেশের বাজারে বিক্রি করা হয় না—বিভিন্ন পোশাক কারখানা এগুলো দিয়ে তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে।

তিনি আরও বলেন, এই সুতা দিয়ে বিদেশি অর্ডারের সোয়েটার তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন শিপমেন্টগুলো পুড়ে যাওয়ায় সেই অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে শুধু আমদানিকারকই নয়, আমরা সিএনএফ এজেন্ট, এমনকি পোশাক কারখানার কর্মচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি সহায়তা দাবি করে তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি দ্রুত একটি কার্গো ভিলেজের বিকল্প সংরক্ষণাগার তৈরিরও অনুরোধ করেছি, যেখানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকবে। এখনকার মতো বাইরে মালামাল রাখলে তা বৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অন্যদিকে সিএনএফ এজেন্ট কোম্পানি ইমুট্রান্স বাংলাদেশ লজিস্টিক্স লিমিটেডের ম্যানেজার (আমদানি-রপ্তানি শাখার ইনচার্জ) হাসান জানান, তাদের চারটি ডকুমেন্টসহ প্রায় ১৩ হাজার ডলারের কনসাইনমেন্ট পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, এত বড় শিপমেন্ট হওয়ায় এটি ইনস্যুরেন্স করা ছিল বলে আশা করছি। সাধারণত বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট ইনস্যুরেন্সের আওতায় থাকে। ইনস্যুরেন্স থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের অধীনে কোম্পানি ক্ষতিপূরণ বহন করবে। তবে এখনো বায়ারদের কাছ থেকে ক্লেইম বা প্রতিক্রিয়া পাইনি। আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। না হলে আমরা স্বাভাবিকভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো না।‌ কারণ এই আগুনের দীর্ঘ মেয়াদি একটা প্রভাব পড়বে একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ওপর।

এর আগে গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের সাত ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে শতাধিক আমদানি-রপ্তানি পণ্য, গার্মেন্টসের কাঁচামাল ও বিভিন্ন কনসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে বিমানবন্দরের পণ্য পরিবহন কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৩:৩৬   ৪৬ বার পঠিত