শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

সংস্কৃতি মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে : কাদের গনি চৌধুরী

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সংস্কৃতি মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে : কাদের গনি চৌধুরী
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫



সংস্কৃতি মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে : কাদের গনি চৌধুরী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি একটি জাতি ও রাষ্ট্রে দর্পণস্বরূপ। জাতি কতটা সভ্য বা উন্নত, সেটির পরিমাপ দেয় সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে। মানুষের চিন্তাধারাকে বিকশিত করে।
সংস্কৃতি ছাড়া মানুষের জীবন মূল্যহীন। সংস্কৃতি আমাদের চরিত্রকে পূর্ণ করে। সংস্কৃতি মানেই মানুষের চিন্তা ও আচরণের সৌন্দর্য। যে সমাজ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ, সে সমাজ শান্তি ও আনন্দে সমৃদ্ধ।
সংস্কৃতি আমাদের অতীতকে স্মরণ করায় এবং ভবিষ্যতের পথ দেখায়। সংস্কৃতি মানুষের হৃদয়কে মানবিক ও সৌন্দর্যে ভরিয়ে দেয়।’

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ট্র্যাব আয়োজিত ‘ট্র্যাব বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ট্র্যাব সভাপতি কাদের মনসুরের সভাপতিত্বে ও দুলাল খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, তাশিক আহমেদ, কামরুল হাসান দর্পণ, শফিকুর রহমান, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি, ওমর ফারুক মুন্না, লায়ন আনোয়ারা বেগম নিপা প্রমুখ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কৃতি আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ। সমাজে ন্যায় ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করে। আমাদের চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে। আমাদের সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। মানুষের আত্মাকে আলোকিত করে।
মানুষের চরিত্রকে নিখুঁত করে। মননশীলতা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়। মানুষের চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে। মানুষের চরিত্রকে নিখুঁত করে। সংস্কৃতি মানে জীবনকে সুন্দরভাবে বাঁচানো। সংস্কৃতি ছাড়া মানুষের জীবন অন্ধকার।’

আরো পড়ুন
হাদিকে দেখতে গেলেন জাকের পার্টির মহাসচিব

হাদিকে দেখতে গেলেন জাকের পার্টির মহাসচিব

তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি নিয়ে এত মাতামাতির কারণ হচ্ছে সংস্কৃতিতে পরিচয় মেলে একটি জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা, চরিত্র, রুচিবোধ চালচলন বা জীবনবোধে। পশুর জীবনে সময়ের তালে বাঁচার প্রক্রিয়ায় উন্নতি আসে না। তাই তাদের পরিচয়, তাদের জীবনবোধ সব সময় একই থাকে। কিন্তু মানুষ তার সমাজকে নিয়ে সামনে এগোয়, পূর্বের চেয়ে উন্নততর ও সভ্য হয়। হাজার বছর পূর্বে পশু যা খেত আজও খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান অবিকল আছে। মানুষের সামনে এগিয়েছে। এক সময় মানুষ বস্ত্রহীন ছিল, এরপর গাছের ছাল, পশুর চামড়া এবং পাতা ব্যবহার করত পোশাক হিসেবে। এখন মানুষ সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে। আদিম যুগে মানুষ কাঁচা মাংস খেতো, ফল, শিকড় এবং অন্যান্য বন্য উৎস থেকে সংগৃহীত খাবার খেত। এখন মানুষ রান্না করা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খান। সামনে এগোনোর এই যে প্রক্রিয়া এটিই হলো সংস্কৃতি। তাই বলা হয়, সংস্কৃতি জাতিকে সভ্য করে। মনে রাখবেন খনির স্বর্ণ আর অলংকারের স্বর্ণ এক নয়, উভয়ের মাঝে যে পার্থক্য তার পশ্চাতে থাকে দীর্ঘ পরিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া। তেমনি সভ্য মানুষ আর অসভ্য মানুষ এক নয়। এই পার্থক্যের মূলে থাকে একটি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া। সংস্কারের এই ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়াকে বলা হয় সংস্কৃতি।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, একেক দেশে একেক ধরনের সামাজিকতা ও সংস্কৃতি বিরাজমান। আমাদের সংস্কৃতি সম্প্রীতির সংস্কৃতি। এ ঐতিহ্য আমরা যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী লালন করে আসছি। এখানে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। যেখানে নেই কোনো হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান দ্বন্দ্ব, নেই জাতি ধর্মের বিদ্বেষ, সামাজিক সহাবস্থান এতই মজবুত যে সবাই এখানে এক পরিবারের মতো আছি। আমাদের ঈদে তারা আসে, তাদের পূজান-পার্বণে আমরা যাই। এক আড্ডা থেকে আজানের ধ্বনি শুনে মুসলিম যাচ্ছে মসজিদে, প্রার্থনায় সময় হয়ে গেছে বলে খ্রিস্টান যাচ্ছে গির্জায়, হিন্দু যাচ্ছে মন্দিরে পূজা দিতে আর বৌদ্ধরা যাচ্ছে তাদের প্রার্থনাগৃহ প্যাগোডায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন নিদর্শন দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। আমরা বাংলাদেশিরা অত্যন্ত সচেতনভাবেই বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা আমাদের আদর্শ। ৫২, ৬৯, ৭০, ৭১, ৯০ ও ২০২৪ সালে এ জাতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাক্ষর রেখেছে। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর একতাকে চিরভাস্বর করেছে। মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, খাসিয়া, সাঁওতাল নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে যুদ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকটি উৎসবে বাঙালি জাতি এক হয়ে যায়। পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা, বৈসাবি আর জাতীয় দিবসগুলোতে সাম্প্রদায়িক পরিচয় ভুলে এক জাতি হিসেবে সকলে সমান অংশগ্রহণ করে। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, এই যে ঐতিহ্যের কথা বলছি, এই ঐতিহ্য বিনষ্ট করে সমাজে ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি মহল। তারা আজ মাজার ভাঙছে, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়ছে, বাউলদের পেটাচ্ছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি নয়। এটা মব। মনে রাখবেন, ঘৃণা কখনো জ্ঞান থেকে ছড়ায় না। এটা ছড়ায় অজ্ঞতা ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে। মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে খুন করেছিলে যে ব্যক্তি, বিচারক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সাদাতকে কেন হত্যা করেছিলে তুমি? উত্তরে সে বলল, কারণ সে সেক্যুলার ছিল। বিচারক তখনই পরের প্রশ্নটি করলেন, সেক্যুলার মানে কী? উত্তরে সে বলল, ‘আমি জানি না।’ প্রয়াত মিসরীয় লেখক নাগিব মাহফুজকে ছুরি মেরে হত্যা চেষ্টাকারী একজনকে প্রশ্ন করেছিলেন বিচারক, কেন তুমি মাহফুজ সাহেবকে ছুরিকাঘাত করেছো? জবাবে সে বলল, কারণ তিনি ধর্মবিরোধী উপন্যাস চিলড্রেনড অব গেবালাবি উপন্যাসটি লিখেছিলেন। বিচারক আগ্রহ প্রকাশ করলেন, তুমি পড়েছো সে উপন্যাস? সে বলল—না। মিসরীয় সাহিত্যিক ফারাজ ফাওদাকে হত্যাকারী সন্ত্রাসীকে প্রশ্ন করেছিলেন বিচারক, ফারাজ ফাওদাকে মেরে ফেললেন কেন? সন্ত্রাসী বলেছিল, কারণ তার ঈমান নেই। বিচারক জানতে চাইলেন, তুমি কিভাবে বুঝলে তার ঈমান নেই! সে বলেছিল, তার বইগুলো পড়লেই বোঝা যায় তার ঈমানহীনতার পরিচয়। বিচারক বললেন, ফারাজ ফাওদার কোন বই পড়ে তুমি বুঝতে পেরেছো তার ঈমানহীনতার বিষয়? জবাবে বলল সে, না আমি পড়িনি। বিচারক বললেন, জানলে কিভাবে? কেন পড়োনি? জবাবে সে বলল— ‘আমি লিখতে-পড়তে জানি না, তাই পড়তে পারিনি, কিছু লোক বলছিল আর তা আমি শুনেছি, তাতেই বোঝা যায় তার ঈমান নেই। সবগুলো ঘটনাই পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, ঘৃণা কখনো জ্ঞানের মাধ্যমে ছড়ায় না বরং অজ্ঞতার মাধ্যমে ছড়ায়। সুতরাং কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আমাদের উচিত সে বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জানা, সম্ভব হলে প্রমাণসহ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা এক দুর্লভ ও পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সুরক্ষিত করার দায়িত্ব প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের অপরিহার্য কর্তব্য। স্বকীয় জাতিসত্তা ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতির লালন ও বিকাশের দ্বারাই স্বাধীনতার ভিতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৫:২৯   ৬ বার পঠিত