ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫



ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ

বাংলাদেশে এ বছর রমজানে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২,৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে আয়োজিত এক বৈঠকে ১৪৪৬ হিজরি সনের ফিতরার এই হার নির্ধারণ করা হয়।

গত বছরের তুলনায় এবার ফিতরার হার কিছুটা কমেছে। ১৪৪৫ হিজরিতে সর্বনিম্ন ফিতরা ছিল ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২,৯৭০ টাকা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মালেক। বৈঠকে ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কমিটির সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের ফিতরার হার সম্পর্কে জানান।

সাদাকাতুল ফিতর কেন আদায় করতে হয়

অসহায় প্রতিবেশি ও স্বজনদের জন্য ফিতরা, দান-অনুদান ও উপহার সামগ্রী প্রদান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ারও অন্যতম মাধ্যম। রোজা পালনে কোনোভাবে যদি রোজার আংশিক ক্ষতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়; তার সমাধান ও মুক্তির মাধ্যম হচ্ছে- সদাকাতুল ফিতর আদায় করা। যা আমাদের জন্য একান্ত আবশ্যকীয়।

রসুল সা. বলেছেন, দুটি কারণে সাদাকাতুল ফিতরকে উম্মতের জন্য অবধারিত করা হয়েছে। এক.অশ্লীল কথা ও অর্থহীন কাজ হতে মাহে রমজানের সাওমকে পবিত্র করার জন্য। দুই. গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। (সুনানে আবি দাউদ ১৬০৯)

সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের উপকারিতা

সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের তাৎপর্য অত্যাধিক। এতে ধনী ও দরিদ্রদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়৷ একজন মুসলিম ঈদে আনন্দ করবে আর তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকবে, কষ্ট পাবে এরূপ ইসলামে কাম্য নয়। বরং ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের মাঝে সুসম্পর্ক ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামের আদর্শ।

দীর্ঘ একমাস সাওম পালনের পর, অসহায় দুস্থ মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয় এই সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে। অপরদিকে সাদাকাতুল ফিতর এর মাধ্যমে একমাস সাওম পালনের সময় ত্রুটি বিচ্যুতিগুলোর কাফফারা আদায় হয়ে যায়। এতে রমজানের সাওমের পবিত্রতা রক্ষা পায়।

সাদাকাতুল ফিতর কারা দিবে

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে এ ফিতরা আদায় করে দিতে হবে। যেসব লোকের ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তাদের বিবরণ হাদিস শরিফে উল্লিখিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আজাদ, পুরুষ-নারী, প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর রসুল সা. সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক ‘সা’ পরিমাণ আদায় করা অবধারিত করেছেন। ঈদের নামাজের জন্য বের হবার আগেই লোকজনকে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি ১৫১২)

সদকাতুল ফিতরের নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যাঁর ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল ক্বাদির : ২/২৮১)

এমনকি পবিত্র রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার যদি সম্পদ থাকে, তাহলে তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি ১/১৯২)

সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ

সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদিসসমূহে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়, যব, খেজুর, পনির,কিসমিস ও গম। রসুল সা.-এর যুগে মোট চারটি পণ্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো। খেজুর, কিশমিশ, যব ও পনির। হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন, আমরা এক সা পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিশমিশ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (বুখারি ১৫০৬)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুল সা. মুসলিমদের স্বাধীন ও ক্রীতদাস পুরুষ ও নারী এবং ছোটো ও বড়ো সবার জন্য এক সা (প্রায় সাড়ে ৩ কেজি) খেজুর বা গম ফিতরা আবশ্যক করেছেন। (বুখারি ১৫০৩)

সাদাকাতুল ফিতর যব, খেজুর, পনির বা কিসমিস দ্বারা আদায় করলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে । আর গম বা গমের আটা বা গমের ছাতু দ্বারা আদায় করলে আধা ‘সা’ দিতে হবে।এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত।

আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ গম,গমের আটা বা গমের ছাতু যদি হয়,তবে তা পৌনে দুই সের সাবধানতাবশত পুরো দুই সের দিতে হবে। এর সমপরিমাণ মূল্যও দেওয়া যায়। আর যদি খেজুর,কিসমিস,যব,যবের ছাতু এসবের কোন একটি দ্বারা ফিতরা দেয়া হয়,তাহলে ৩ কিলো দেড়শ গ্রাম অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে।বর্ণিত যে বস্তুর হিসাবে দেওয়া হোক কিছু বেশি দেওয়াই ভালো। কারণ সামান্য কম হলে ফিতরা আদায় হবেনা। আর বেশি দিলে সওয়াব পাওয়া যায়। (আলমগীরী ১/১৯৩ ও দারুল উলুুুম ৬/৩২৬)

উল্লিখিত খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে সেগুলোর কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার মূল্য আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। মূল্যের দিক থেকে ওই খাদ্যবস্তুগুলোর মধ্যে তফাত থাকলেও সবচেয়ে কম দামের বস্তুকে মাপকাঠি ধরে যদি কেউ ফিতরা আদায় করে দেয়, তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

সাদাকাতুল ফিতর কখন আদায় করতে হয়

সাদাকাতুল ফিতর অবশ্যই ঈদের সালাতের জন্য ঈদগাহে যাবার পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দিতে হবে। অন্যথায় সাদাকাতুল ফিতরের যে পূর্ণ ফজিলত আছে তা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো।

রসুল সা. ঈদগাহে যাবার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে সদকা আদায় করল, তাই গ্রহণযোগ্য সদকাতুল ফিতর। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজের পর তা আদায় করল, তা সাধারণ দান-অনুদানের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হলো। (সুনানে আবি দাউদ ১৬০৯ )

বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৭:১১   ১২৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


আল কোরআন ও আল হাদিস
আজকের রাশিফল
সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ভারতীয় বিভিন্ন মালামাল জব্দ
৫৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি : এ টি এম মাসুম
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলের হামলা
সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
সাংবাদিকদের সর্বদা সত্যের পক্ষে কথা বলতে হবে : ডা. জাহিদ
গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
১০ বছরেও সংস্কার হয়নি পশ্চিম মালিপাড়ার রাস্তা দুর্ভোগে এলাকাবাসী

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ