জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে এনজিও থেকে কিস্তির টাকা তুলে না দেওয়ায় নুরজাহান আক্তার সাথী (২৫) নামে এক গৃহবধূকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত তিনদিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই গৃহবধূ।
শনিবার(৩ মে) দুপুরে নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ স্বামীসহ শশুরবাড়ি লোকজনের কোন সাড়া না পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাতে পোগলদিঘা ইউনিয়নের কান্দারপাড়া বাজার সংলগ্ন মেইনরোড এর পূর্বপাশে জুলফিকার আলীর বাসায় সাথীর স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন এসে হামলা করে। এসময় সাথীকে মারধর সহ ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে তারা। পরে সাথী প্রাণ রক্ষার ভয়ে দৌড়ে বাসার মালিকের ঘরে ফ্রিজের পাশে গিয়ে পালালে ওখানেই গিয়ে তারা টেনেহিঁচড়ে সাথীকে আবারো বের করে মারধর করে। পরে বাসার মালিক পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং সাথীকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ আহত সাথীকে রাত গভীর হওয়ায় বাসার মালিকের জিম্মায় রেখে যান। পরেরদিন বৃহস্পতিবার সকালে সাথীর স্বজনরা সংবাদ পেয়ে সাথীকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বাসার মালিক জুলফিকার আলী বলেন, গত ৩ মাস আগে রনি ও তার স্ত্রী আমার বাসায় একটি রুম ভাড়া নেয়। এরপর হতেই দেখছি তারা দুজনেই একদিন পরপরই ঝগড়া বিবাদ ও মারামারি করে। আমি একয়েক মাসে দেখেছি মেয়েটি খুব বিনয়ী ও পরিশ্রমী। তবুও স্বামী তাকে সন্দেহ করে ও কথায় কথায় ত্রুটি ধরে মারধর করে। মেয়েটির পরিবারের সাথে যোগাযোগও করতে পারে না। সেদিন রাতে আমরা শুয়ে পড়েছি, এসময় তাদের ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাই বাঁচাও বাঁচাও। পরে দৌড়ে গিয়ে দেখি মেয়েটির স্বামী রনি তালুকদার, তার শশুর এবং দুই দেবরসহ টানাহেঁচড়া ও মারধর করছে সাথীকে। পরে এই দেখে তাদের বাধা দিলে তারা উল্টো আমার উপর উত্তেজিত হয় এবং আমাকেই মারতে আসে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আমার জানামতে মেয়েটির সাথে তারা চরম অন্যায় করা হয়েছে। এর অবিচারের বিচার হওয়া উচিত।
নির্যাতিতা সাথী জানান, এটি আমার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রায় ১৪ মাস যাবৎ আমাদের ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিয়ে হয়েছে। বিয়ের সময় নগদ দেড় লক্ষ টাকা যৌতুকসহ স্বর্ণালঙ্কার দিয়েছে আমার পরিবার। তবুও তাদের মন ভরেনি। এখন আরো যৌতুক চায়। আমার স্বামী বাসের কন্ট্রাক্টর, শশুর সিএনজি চালক ও দেবর বাসে হেলপার। তারা সবাই মাদকাসক্ত। তারা অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত। তাদেরকে এনজিও থেকে টাকা তুলে দিলে পরবর্তীতে তারা আর টাকা দিবে না। পরে আমি বিপদে পড়বো বিধায় টাকা তুলে দিতে রাজি হয়নি। এজন্যই সবাই আমাকে মারধর করেছে।
বিয়ের পর তাদের পারিবারিক এই অবস্থা দেখে আমার স্বামীকে ভালো করার প্রত্যাশায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছি। তবুও তারা আমার স্বামীকে ভুলভাল বুঝিয়ে আমাকে এইভাবে মারধর করেছে। আমি এর বিচার চাই।
এবিষয়ে শ্বশুর মোফাজ্জাল তালুকদার বলেন,ছেলে বউ নিয়ে আলাদা ভাবে অন্য জায়গাতে বাসা ভাড়া করে থাকে। তাদের মধ্যে কেন, কি নিয়ে মারামারি হয়েছে, সেটা আমি জানিনা। তবে ছেলের বউটা খুব রাগি ও ঝগড়াটে।
এঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী রনি তালুকদারের কাছে মুঠোফোন জানতে চাইলে, তিনি চলন্ত বাসে আছেন অযুহাতে পাশ কাটিয়ে যান।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ চাঁদ মিয়া বলেন, ‘এঘটনায় এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০০:৩৩ ১২১ বার পঠিত