
মানবচরিত্রের অন্যতম এ গুণ ঈমানেরও অঙ্গ। লজ্জা অসাধারণ এক গুণ। ঈমানদার হতে হলে এ গুণ থাকা প্রয়োজন। নবীজি সা. লজ্জাশীলতার প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলেন, ‘লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’ (মুসলিম হাদিস ৫১)
রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। তারমধ্যে প্রথমে এ ঘোষণা করা, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, সর্বনিম্নের শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। লজ্জা হলো ঈমানের একটি শাখা।’ লজ্জাশীলতা জান্নাত লাভের অন্যতম গুণ। হাদিসের ভাষ্যমতে লজ্জাশীলতা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়, নির্লজ্জতা মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানদারের স্থান জান্নাত। নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, আর দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম। (তিরমিজি হাদিস ২০০৯)।
লজ্জা নারী ও পুরুষের ভূষণ। ইসলামের নির্দেশনায় নৈতিকতার মহামূল্যবান একটি গুণ লজ্জা। যখন কোনো মানুষের লজ্জা হারিয়ে যায়, তখন সবই হারিয়ে যায়। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘প্রতিটি দীনেরই একটি চরিত্র রয়েছে। ইসলামের মূল চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা।’ (ইবনে মাজাহ হাদিস ৪১৮১)
যারা লজ্জাশীলতার গুণ হারিয়ে ফেলে, তারা দীন থেকে খুব সহজে দূরে সরে যায়। কারণ তখন তারা কোনো পাপ কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না; বরং পাপ করেই অহংকার বোধ করে। এ জন্যই নবীজি সা. বলেছেন, ‘তুমি যখন নির্লজ্জ হয়ে পড়বে তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ (বুখারি, হাদিস ৬১২০)
লজ্জা ঈমানের অঙ্গ হয়ে ওঠার পেছনেও কারণে রয়েছে। শুধু শুধুই রাসুল সা. এ বিষয়ে কথা বলেননি। লজ্জা মানুষকে পাপাচার থেকে বিরত রাখে। যার মধ্যে লজ্জাশীলতা যতটুকু থাকে, সে কোনো অন্যায় করতে ততটাই সংকোচবোধ করে। ফলে সহজেই সে বেঁচে যায় বহু অন্যায় ও অসামাজিক পাপ কাজ, গুনাহের কাজ থেকে। লজ্জাশীলতার কারণেই মন্দ কাজ পরিহার করে চলতে হয় সুন্দর ও ন্যায়ের পথে। প্রিয় নবী সা.-এর কী অর্থপূর্ণ সরল বাণী,
‘লজ্জাশীলতা কেবলই কল্যাণ নিয়ে আসে।’ (বুখারি হাদিস ৬১১৭)
হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘নির্লজ্জতা ব্যক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ করে। আর লাজুকতা তার শ্রী বৃদ্ধি করে।’ (তিরমিজি হাদিস ১৯৭৪)
মানবচরিত্রের এ গুণ কোনো নতুন বিষয় নয়। বরং যখন থেকে মানব-ইতিহাসের যাত্রা, তখন থেকেই লজ্জাশীলতার সূচনা। প্রথম নবী ও প্রথম মানুষ হজরত আদম আ. আর তার স্ত্রী হজরত হাওয়া-এর ঘটনা তো কোরআনেই বর্ণিত হয়েছে-
‘যখন তারা সেই ফলের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশিত হয়ে পড়ল। তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল’ (সুরা: আরাফ ২২)
লজ্জা বলতে আমরা সাধারণত মানুষে মানুষে পারস্পরিক লজ্জার কথাই বুঝি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই, কিন্তু নবী মুহাম্মাদ সা. আমাদেরকে লজ্জাশীলতার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিকের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আলহামদু লিল্লাহ, আমরা লজ্জা অবলম্বন করি।
নবীজি সা. তখন বললেন, ‘আমি তো এটা বলিনি। বরং আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা হবে এমন; তুমি মাথা হেফাজত করবে, মাথা যা কিছু ধারণ করে তাও হেফাজত করবে, পেট হেফাজত করবে, পেট সংলগ্ন যা কিছু আছে তাও হেফাজত করবে, আর মৃত্যুকে স্মরণ করবে, স্মরণ করবে (মৃত্যু পরবর্তী সময়ে) চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়াকেও। আর যে পরকাল কামনা করে সে তো দুনিয়ার জৌলুস বর্জন করে। এগুলো যে করতে পারল সেই আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করল। (তিরমিজি হাদিস ২৪৫৮)
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৭:৫২ ৭ বার পঠিত