প্রথম দিকে যারা নবীজির আহ্বানে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » প্রথম দিকে যারা নবীজির আহ্বানে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন
সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫



প্রথম দিকে যারা নবীজির আহ্বানে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন

মক্কার আকাশ তখনও তাওহিদের সোনালী আলোয় আলোকিত হয়নি। কাবার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তির ভিড়, মানুষের হৃদয়ে অন্ধকার, আত্মার ক্ষুধা অশান্ত। এমন সময়ে, এক নিঃশব্দ রাতের নির্জনতায়, হিরা গুহার অভ্যন্তরে এক অমর ইতিহাসের সূচনা ঘটে।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তরে নাজিল হয় প্রথম ওহি। اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ পড়ুন, আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।(সুরা আলাক:১) এই একটিমাত্র শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল একটি নতুন যুগের আহ্বান। তবে নবুওয়াতের প্রাথমিক ধাপ ছিল ভয়, দ্বিধা, অশ্রু ও আশার মিশ্র এক যাত্রা। এই আহ্বান প্রথমে কারা গ্রহণ করেছিলেন? কে প্রথম রসুল রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশে দাঁড়ালেন? তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, খাদিজা রা., আবু বকর রা., আলি রা.ও যায়েদ রা.।

প্রথম মুসলমান খাদিজা রা.ভালোবাসা ও ত্যাগের এক মহিমান্বিত প্রতিচ্ছবি

যখন নবী রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিরার গুহা থেকে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরে এলেন, তার হৃদয় ভয়ে, শিহরণে কাঁপছিল। তিনি উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা.-এর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন। খাদিজা রা. তাকে সান্ত্বনা দিলেন, এবং তাকে দৃঢ়ভাবে বললেন, كَلَّا! وَاللّٰهِ لَا يُخْزِيكَ اللّٰهُ أَبَدًا না, কখনোই নয়! আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনোই অপমান করবেন না। (সহিহ বুখারি: ৩)

খাদিজা রা. শুধু সান্ত্বনাই দেননি, বরং সর্বপ্রথম ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে ঈমান গ্রহণ করেন। নিজের সম্পদ, হৃদয় ও জীবন উৎসর্গ করে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও অটল সঙ্গী হয়ে ওঠেন। আল্লাহ তাআলা তার এই অবদানের প্রশংসা করেছেন, আর নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন, أَبْشِرِي يَا خَدِيجَةُ بِيْتٍ فِي الْجَنَّةِ হে খাদিজা! তোমার জন্য জান্নাতে মুক্তোর প্রাসাদের সুসংবাদ। (সহিহ বুখারি:৩৮২০)

আবু বকর রা. প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মুসলমান

ইসলামের প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মুসলমান হলেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা.। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলেন, তিনি কোনো দ্বিধা, প্রশ্ন বা শর্ত ছাড়াই বললেন, أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللّٰهِ আবু বকর রা.শুধু নিজের ঈমানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; তিনি ইসলামের প্রথম দাওয়াতদাতা হয়ে ওঠেন।

তার হাত ধরে ইসলামের প্রথম দিককার শ্রেষ্ঠ সাহাবারা ইসলাম গ্রহণ করেন,উসমান ইবনু আফফান রা., আবদুর রহমান ইবনু আউফ রা., সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রা., তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ রা. প্রমুখ। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আস-সিদ্দিক উপাধি দেন, কারণ মেরাজের ঘটনার পর তিনি দ্বিধাহীনভাবে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সব কথা বিশ্বাস করেছিলেন। (সহিহ বুখারি:৩৬৭৫)

আলি রা. ছোট্ট বয়সে অটল ঈমানের প্রদীপ

তখন মাত্র দশ বছরের শিশু। কিন্তু নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহচর্যেই ছিলেন আলি ইবনু আবি তালিব রা.। ওহির পর নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। কোনো দ্বিধা ছাড়াই আলি রা. ঈমান গ্রহণ করেন। ইবনু হিশামের সিরাতে উল্লেখ আছে, فَأَسْلَمَ عَلِيٌّ وَهُوَ ابْنُ عَشْرِ سِنِينَ আলি ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। (সিরাতু ইবনি হিশাম: ১/২৪৫) তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শিশু মুসলমান। আল্লাহর পথে তাঁর সাহস, ত্যাগ ও আনুগত্য পরবর্তী ইতিহাসে অতুলনীয়।

যায়েদ ইবনু হারিসা রা. স্বাধীনতার পরিবর্তে ভালোবাসার দাসত্ব

জায়েদ রা. ছিলেন একজন দাস, যাকে খাদিজা রা. নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতে উপহার হিসেবে দেন। কিন্তু নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দাস হিসেবে রাখেননি, বরং ভালোবেসে নিজের দত্তকপুত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। যখন যায়েদ রা.-এর পরিবার এসে তাঁকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে চাইল, তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন,

আমি মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গ ত্যাগ করতে পারব না। তার সাথে থাকা-ই আমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান। (ইবনু সাদ,তাবাকাত: ৩/ ৪৩) নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি এই ভালোবাসা ও আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ যায়েদ রা. ই হলেন প্রথম মুক্ত দাস, যিনি ইসলামের আলোয় সিক্ত হন।

প্রথম মুসলমানদের ত্যাগ ও মক্কার নির্যাতন

ইসলামের প্রথম যুগে মক্কার বাতাস ভয়াবহ অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল। যারা তাওহিদের ডাক গ্রহণ করেছিল, তারা ছিল স্বল্পসংখ্যক, কিন্তু তাদের ওপর নেমে আসত অসহনীয় নির্যাতন। কেউ পরিবার হারিয়েছেন, কেউ সম্পদ।

তবু তারা ভয় পাননি, কারণ তাদের হৃদয়ে ছিল এই আয়াতের দীপ্তি إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ যারা বলে, আমাদের প্রভু আল্লাহ তারপর তারা দৃঢ় থাকে, তাদের জন্য কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সুরা আহকাফ:১৩)

ইসলামের প্রথম চারজন মুসলমান ছিলেন সেই চারটি প্রদীপ, যাদের আলোয় সত্যের পথ আলোকিত হয়েছে। খাদিজা রা.-এর ভালোবাসা, আবু বকর রা.-এর সাহস, আলি রা.-এর নিষ্পাপ আনুগত্য এবং যায়েদ রা.-এর আত্মত্যাগ আমাদের জন্য আজও অনুপ্রেরণা। যদি আমরা ইসলামের প্রথম ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চাই, তবে তাদের ত্যাগ, ধৈর্য ও ঈমানের দীপ্তিকে আমাদের জীবনের আদর্শ বানাতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:২৩:৫৯   ২৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


প্রথম দিকে যারা নবীজির আহ্বানে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন
ইতিহাসের এই দিনে
আজকের রাশিফল
নুরের ওপর হামলার দায় সরকারকে নিতে হবে: আসিফ
মনোহরদী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করলেন আইন উপদেষ্টা
ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চারাগাছ বিতরণ কর্মসূচি
সিদ্ধিরগঞ্জে ১১১ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
সোনারগাঁয়ে খালে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ