
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থা একই সঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগ, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যম এবং প্রশমন উদ্যোগের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, COP30-এ বাংলাদেশের জাতীয় কার্বন বাজার কাঠামোর প্রাক-ঘোষণা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্পষ্ট নীতি কাঠামো তৈরি করেছে এবং প্রশমন প্রকল্প অনুমোদনের একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া প্রণয়ন করেছে। তিনি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে আরও বিস্তৃত পরামর্শ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান, যাতে স্থানীয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মতামত যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
আজ জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত Joint Crediting Mechanism (JCM) Project Matchmaking and Advancing Article 6 Implementation in Bangladesh শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের হালনাগাদ এনডিসি অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬.৩৯% শর্তহীন এবং ১৩.৯২% শর্তাধীন নির্গমন হ্রাসের অঙ্গীকারের বিষয়টি তুলে ধরে উপদেষ্টা দ্রুত বাস্তবায়ন রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এনডিসি জমা দেওয়া যথেষ্ট নয়; বরং এর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ অভিযোজন অর্থায়ন পেলেও উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না, যদি প্রশমন জোরদার না হয়। অভিযোজনের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই স্থিতিস্থাপকতার একমাত্র পথ হলো প্রশমনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
উপদেষ্টা আরো বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো আন্তর্জাতিক সরবরাহচেইনের পরিবেশবান্ধব মানদণ্ডের কারণে টেকসই উৎপাদনে সবচেয়ে দ্রুত রূপান্তর ঘটায়। তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৃক্ষরোপণভিত্তিক সিএসআরের বাইরে গিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা, টেকসই কৃষি এবং প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন, যেখানে উন্নত প্রযুক্তি, তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ, কঠোর পরিবেশগত মান বজায় রাখা, সঠিক স্থান নির্বাচন এবং তথ্য প্রকাশ নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ সহযোগিতার জন্য অনির্দিষ্টকালের অপেক্ষা করতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব অভিযোজন ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে জাপান ব্যতিক্রম হিসেবে বরাবরই অংশীদারিত্ব, প্রযুক্তি সহযোগিতা ও প্রশমন–অভিযোজন উদ্যোগে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাপানের পরিচ্ছন্ন নগরায়ন, মানবিক নকশা এবং জনবান্ধব উন্মুক্ত স্থানের উদাহরণ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এই ধরন বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনায় অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ এবং জাপান পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি এটিকে দুই দেশের পরিবেশগত সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব এবং জাপানি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি, জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানো এবং আর্টিকেল ৬-সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জেসিএম অফিসের পরিচালক কেইতারো তসুজি Article 6 Guidebook for Private Sector এর যৌথ উদ্বোধন করেন, যা IGES–এর কারিগরি সহায়তায় প্রণীত। এই গাইডবুকের মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগযোগ্য প্রশমন প্রকল্প চিহ্নিত করা, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব তৈরি এবং ভবিষ্যৎ কার্বন বাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪১:৩৪ ১০ বার পঠিত