মতুয়ারা যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেই আছেন তা প্রমাণ করতে মরিয়া শাসক দল৷ আর তাই আগামী ৩ নভেম্বর নদিয়ায় মতুয়া সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ রবিবার তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিজ বাসভবনে একটি বৈঠক করেন৷ তার পরেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়৷
অন্যদিকে শনিবার নদিয়ার মাজদিয়ায় একটি সভা করেন বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। জানা গিয়েছে, সেই সভায় মতুয়া সম্প্রদায়ের ব্যাপক জমায়েত হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণেই তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন পার্থবাবু৷ দলের মহাসচিব তথা মন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস, রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের তিন নেতা৷
বৈঠকের পরই সিদ্ধান্ত হয় ৩ নভেম্বর ওই একই স্থানে পাল্টা সভা করবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ প্রশ্ন উঠছে তবে কি বিজেপির শক্তিতে চিন্তায় পড়ছে তৃণমূল? যদিও যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস -কে জানান, ‘‘পাল্টা সভা নয়, একটি মতুয়া সম্মেলন করা হবে৷’’ আর মুকুল রায়ের সভায় মতুয়া জমায়েত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতুয়াদের ওখানে নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু মতুয়ারা যখন দেখেন এনআরসির কোনও আলোচনা হচ্ছে না তখন তারা সভা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন৷’’
নদিয়ার সংগঠন নিয়ে বিরক্ত খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিছুদিন আগেও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়েও বিস্তর ঝামেলা সামাল দিতে স্বয়ং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে৷ এলাকার বিধায়ক সমীর পোদ্দারের ওপর ভরসা করতে না পেরে কংগ্রেস ত্যাগী জাঁদরেল নেতা শঙ্কর সিং-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ কারণ এখানে রয়েছে নেতাদের মধ্যে একাধিক গোষ্ঠী৷ তাতে ছড়াচ্ছে কোন্দল৷ স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কোন্দল রুখতে বৈঠক করেন নেতাদের সঙ্গে৷ আর এই গোষ্ঠী কোন্দলের পুরোপুরি ফায়দা লুঠতে প্রস্তুত গেরুয়া শিবির৷ লোকসভায় নদিয়ায় পদ্ম ফোটাতে একের পর এক জনসভা করে চলেছে বিজেপি৷
বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে পূর্বতন বাম জমানায় নদিয়ায় শক্তি দেখিয়েছিল বিজেপি৷ অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জলুবাবু)৷ তবে তখন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির সখ্যতা ছিল৷ যা এখন নেই৷ কিন্তু নদিয়াতে বিজেপির শক্তি রয়েছে৷
রবিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হওয়া বৈঠকে মতুয়া মহাসংঘের বড় তরফের কুলবধূ মমতাবালা ঠাকুর তথা সাংসদ কিন্তু উপস্থিত ছিলেন না৷ বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি ঘিরেও উঠেছে প্রশ্ন৷ যদিও ব্যস্ততার কারণে তিনি সেদিনের বৈঠকে ছিলেন না বলে ইতিমধ্যেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করা হয়েছে৷ তবে ঠাকুরনগরের বড়মা বীণাপাণিদেবীর অত্যন্ত স্নেহধন্যা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷
নভেম্বরের মাঝামাঝি বীণাপাণিদেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মমতা বলেও জানা গিয়েছে৷ তাই মতুয়াদের নিজেদের দলে টানতে বিজেপি মরিয়া চেষ্টা চালালেও কার্যসিদ্ধি তেমন হবে না বলেই মত রাজনৈতিক মহলের৷ জানা গিয়েছে দুর্গা নবমীর দিন বড়মার জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে যান খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কেক কেটে বড়মার জন্মদিন উদযাপন করা হয়৷
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৫:৪১ ২৬৯ বার পঠিত