
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শঙ্কা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কমতি নেই বাংলাদেশের উন্নয়নের বৃহত্তম অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে একদিকে যেমন শঙ্কা অপরদিকে সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচনের সুযোগ হিসেবে দেখছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের নামে প্রতিষ্ঠিত খ্যাতনামা নীতিনির্ধারণী থিংক ট্যাংক- উইলসন সেন্টারের আয়োজনে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ক এক বিশেষ সেমিনারে দেশটির এমন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও গবেষক বিশেষ ওই সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
উইলসন সেন্টারের উপ পরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র এসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যানের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলাম বি মাইলাম। ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংউইসড প্রফেসর আলি রিয়াজ, সাউথ এশিয়ান জার্নালের প্রকাশক গোলাম সোহরাওয়ার্দী ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ড. তামিনা চৌধুরী।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড জে রানজ, রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সিটিটিউটের গণতন্ত্র এবং সুশাসন বিষয়ক প্রধান ড. জ্যাফরি ম্যাকডোনাল্ড, বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক, হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাংলাদেশ বিভাগের কর্মকর্তা আনান্দ কৃষ্ণা প্রমুখ।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন উল্লেখ করে সেমিনারে প্যানেল আলোচকরা বলেন, এই দিনই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ কি কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসর হবে, না গণতন্ত্রের পথে ফিরে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্খা একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার। যে কোনো মূল্যে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ তাদের এই আকাঙ্খাকে বাস্তবে রূপ দিবে বলে সেমিনারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বক্তারা বলেন, নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের প্রার্থী, সমর্থক এবং তৃনমূল পর্যায়ের কর্মীরাও সরকার পক্ষের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত্র ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’র দৃশ্যমান কোনো আবহ তৈরি হয়নি।
বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলি তুলে ধরে এতে বলা হয় ১৯৯১ সাল থেকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে হাঁটলেও ২০০৬ সালে এসে দেশটি হোঁচট খায়। আর ২০০৮ সালের পর থেকে তা পুরোপুরি পর্যুদস্ত । তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মতো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাকে এক নিমিষেই বাতিল করে দেয়া হয়। ফলে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশে পাকাপোক্ত হয়। ২০১৪ সালে বিএনপি’র নির্বাচন বয়কটের সমালোচনা করে সেমিনারে বলা হয়, দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় অথরিটিরিয়ান রেজিম বা কর্তৃত্ববাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে।
তারা বলেন, বিরুদ্ধ মত দমনে সরকারের দমননীতি অতিতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কেবল বিরোধী রাজনীতিকই নয়, ছাত্র সমাজ, সাংবাদিক কিংবা সুশিল সমাজের প্রতিনিধি কেউই সরকারের রোশানল থেকে থেকে বাদ পড়েননি। ভয়ের সংস্কৃতি চালু করে সরকার যে নিয়ন্ত্রকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের জনগনকেই তাদের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে বলে সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১০:৫৭ ১৮৩ বার পঠিত