
তিনি যেন কলকাতা ময়দানের ‘বড় চেহারার’বিদেশি ফুটবলার৷ বড় ম্যাচে এলেন, খেললেন এবং ম্যাচ জিতিয়ে চলে গেলেন৷ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে রথযাত্রা নিয়ে মামলা হারার পর ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে তৃণমূল৷ সেদিক থেকে দেখতে গেলে শুক্রবার প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের ডিভিশন মামলা ছিল রাজ্য সরকারের জন্য ডার্বি ম্যাচ৷ নিঃসন্দেহেই ডার্বি ম্যাচে জিতেছে রাজ্য সরকার৷
সরকারের পক্ষে ফলাফল এতটাই সদর্থক যে, এই বছরে অন্তত বাংলার মাটিতে রথের চাকা ঘোরার কোনও সম্ভাবনাই রইল না৷ ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ কলকাতায় ফেডারেল ফ্রন্টের সভা৷ ব্রিগেডে ওইদিন ২৫ লক্ষ মানুষের জন সমাগম করতে চান মমতা৷ তৃণমূলের দাবি অ-বিজেপিয় সমস্থ নেতাই থাকবেন ওই মঞ্চে৷ ওই সভা হওয়ার আগে অন্তত বিজেপির রথের চাকা মাটিতে বসিয়ে দিতে পেরেছেন রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ট অনুচর অভিষেক মনু সিংভি৷ ১৯ ডিসেম্বরের আগে অন্তত, বাংলায় মোদী-শাহদের দাপাদাপি দেখা যাবে না৷ তেমন কোনও সম্ভাবনাই দেখছে না রাজনৈতিক মহল৷
বৃহস্পতিবার বিজেপিকে শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রা করার অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী৷ শুক্রবার সকালেই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার৷ আদালতের এই যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রথের সারথি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা অভিষেক মনু সিংভি৷ কিন্তু মামলায় সওয়াল করতে কেন হঠাৎ আইনজীবী সিভি৷ তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত৷
কড়া সুরেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির এই মামলায় বলার কোন অধিকার নেই। যদি তিনি বলেন তাহলে আদালতের সওয়াল শোনায় অসুবিধে রয়েছে৷’তবে শেষ হাসি হাসলেন সিংভিই৷ তার অকাট্য যুক্তি মেনে নিয়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর রায়কে খরিজ করেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ সিংভির সওয়াল ছিল, দেশের সবথেকে বড় বাস ভলভো৷ প্রায় ৫৪ জন ওই বাসে চড়েন৷ গ্রামীণ রাস্তায় ওই বাস চললে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে৷
মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ও রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। কারণ আইন শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব পুলিশের বলে জানান সিংভি৷ গোয়েন্দা রিপোর্ট খুলে দেখেনি সিঙ্গেল বেঞ্চ৷ প্রধান বিচারপতির দেবাশিস করগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার রায়ে জানিয়েছে, রাজ্যের গোয়েন্দা রিপোর্টগুলি সম্পূর্ণ খতিয়ে না দেখেই সিঙ্গল বেঞ্চ রথযাত্রার শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছিল৷ এক্ষেত্রে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর রায়কে খারিজ করে ফের তাঁর বেঞ্চেই(সিঙ্গল বেঞ্চ) মামলাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷
এদিনের পর বড়দিনের ছুটি পড়ে গেল হাইকোর্টে৷ ফের আদালত খুলবে আগামী ২রা জানুয়ারি৷ ফলে আগামী বেশ কয়েকদিন সিঙ্গল বেঞ্চে বিজেপির রথযাত্রা মামলায় কোনও আগ্রগতি সম্ভব নয়৷ যা হবে ২রা জানুয়ারির পর৷ ফলে আপাতত আদালতেই আটকে রইল অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের রথ৷ বঙ্গ রাজনীতির আনাচে কানাচে এখন একটাই গল্প, রাহুলের ঘনিষ্ট ব্যক্তি এসেই বিজেপির রথ থামালো বাংলায়৷ ঠিক সময় ঠিক প্লেয়ারকে মাঠে নামিয়ে মমতাই এখন স্যর অ্যলেক্স ফার্গুসেন৷
বাংলাদেশ সময়: ২২:০২:৩৩ ২১৩ বার পঠিত