
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জনকারী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। গত বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের হতাহতের খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরও মাদক কারবারিদের তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। সাঁড়াশি অভিযানের পরও মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা আসার সব পথ সচল রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। কয়েক দিন আগেও কক্সবাজার জেলার টেকনাফের সাবরাং থেকে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সারা দেশে তিন হাজারেরও বেশি মাদক কারবারির মধ্যে কক্সবাজারেই রয়েছে এক হাজার ১৫১ জন।
কক্সবাজারে ৪৯৮ মামলায় কারাগারে অন্তরীণ ৮৬ জন। মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে শুধু কক্সবাজারেই নিহত হয় ৫১ জন। এর মধ্যে টেকনাফে নিহতের সংখ্যা ২৭। শুধু ডিসেম্বর মাসে টেকনাফ সীমান্ত থেকে ছয় লাখ ৪৬ হাজার ২২১ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ২৯ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। গত মে মাস থেকে পরিচালিত অভিযানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কারবার বন্ধ হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, মিয়ানমার সীমান্তের ৬০টি স্থান দিয়ে ইয়াবা আসছে দেশে।
এ অবস্থায় মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। ‘চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত’ ইয়াবা চোরাকারবারিরা আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজার শহরে জড়ো হচ্ছেন এমন খবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শেষার্ধে তাঁদের আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সারা হতে পারে। টেকনাফের এক আলোচিত ইয়াবা কারবারি ও স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য ফেসবুকে নিজের ‘আত্মসমর্পণ যাত্রা’র খবর প্রচার করলে বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। কোনো কোনো সূত্র থেকে বলা হয়েছে, মাদক কারবারিরা নিজেরাই যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।
নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে মাদক কারবারিরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে এ উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কিন্তু এর নেপথ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলে নানা প্রশ্ন দেখা দেবে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মাদক কারবারিরা ব্যবসা থেকে অর্জিত সম্পদের বৈধতা ও তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নও উঠেছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মহেশখালীতে ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণের পরও সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। আর আত্মসমর্পণ শুধুই যেন লোক-দেখানো নাটক না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৮:০১ ৩২৯ বার পঠিত