
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আজ সংলাপে বসছে। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যকার এ সংলাপ রাজনৈতিক হলেও পার্টনারশিপ বা অংশীদারত্বমূলক সম্পর্কের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালে। সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারও অংশ নেবেন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়াপরবর্তী এমন বৈঠকে উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব চাপে পড়তে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনপরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় অনিয়মের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব। অবশ্য নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবজারভেশন থাকলেও তারা বাংলাদেশ তথা সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। দেশটি বলেছে তারা সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কাজ করবে। নতুন সরকার গঠন হয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলবে। এ নিয়ে সরকারের একটি অবস্থান রয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। আর যে তদন্তের দাবি জানিয়েছে, তার বিষয়ে ইতিবাচক উত্তর দেবে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে। আজকের সংলাপে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি শক্ত রেজুলেশন নেওয়ার জন্য অনুরোধ থাকবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তা ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও সহযোগিতা বাড়ানোর অনুরোধও থাকবে।
নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিতে চান। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে বৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্যগুলো অর্জনে সবার সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব চেয়েছেন।
সূত্র জানায়, জ্বালানি খাত নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মাতারবাড়িতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি জিটুজিতে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আসবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবতা নিয়ে আজকের সংলাপে আলোচনা হবে। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, তবে অন্যান্য দেশের মতো তাদেরও অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের বহুমুখীকরণ চাইবে বাংলাদেশ।
ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সংলাপের ওপর গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্রে জানা গেছে, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। এ সেন্টারে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এরই মধ্যে বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল এন রোজেন ব্লুম বাংলাদেশ সফরকালে এ প্রস্তাব দেন।
সূত্র জানায়, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যÑ ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ানো। এ অঞ্চলে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার রয়েছে সিঙ্গাপুরে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের তথ্য বিনিময় করা হয়, যাতে সমুদ্রযাত্রায় কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। তারই আদলে যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে এ সেন্টার খুলতে চায়। বাংলাদেশেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য উন্নয়ন ও মেরিটাইমের নিরাপত্তা সহযোগিতা।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৮:৪৭ ২৬৫ বার পঠিত