
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে নেত্রকোণার পাঁচ পলাতক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী।
গত ২৮ জানুয়ারি শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। আজ ২৪০ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে থাকা সাতটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে।
পলাতক এই পাঁচ আসামি হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা, মো. আব্দুল খালেক তালুকদার, মো. কবির খান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিন। প্রথমে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও মামলা চলাকালে দুই আসামি আবদুর রহমান (৭০) ও আহমদ আলী (৭৮) মারা যাওয়ায় তাদের আগেই অব্যাহতি দেয় আদালত।
প্রসিকিউশন সুত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার পূর্বধলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির একাত্তরে বড় ভাই আবদুল খালেককে হত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মামলা করেন। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরের বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। এরপর তিনি ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রসিকিউশন বিভাগ ২০১৬ সালের ২২ মে আসামিদের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করে এবং একই বছর ১২ জুন অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে ডা. হেম সুন্দর বাগচী হত্যা, নির্যাতন, লুন্ঠণসহ একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের বাড়িতে নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ আনা হয়।
প্রসিকিউরশন সূত্রে জানা যায়, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তথ্য মতে, আসামিদের মধ্যে মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধে সময় নেজামে ইসলামির নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি জামায়াতের রাজনীতি করতেন। খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সর্বশেষ তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য হন।
এছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। আবদুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৯:৪০ ২৮৩ বার পঠিত