জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘটনা সংঘাতপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যে নতুনভাবে উত্তেজনা ও সহিংস চরমপন্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া এ ঘেঅষণার ফলে জেরুজালেম ইসরায়েলের দখলে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার রক্ষা’ সংক্রান্ত জাতিসংঘের কমিটিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশের এই উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থানী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে তিনি বলেন, আমরা সংশয় প্রকাশ করছি, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর সংক্রান্ত যুক্তরাষ্টের সাম্প্রতিক ঘোষণার ফলে মুসলিম বিশ্বে আরও বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে পারে।
“এ ঘোষণায় সংঘাতপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যে নতুনভাবে উত্তেজনা, শত্রুতা ও সহিংস চরমপন্থার সৃষ্টি হতে পারে- যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ও হুমকি ডেকে আনতে পারে।”
জেরুজালেম মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি- সব ধর্মের অনুসারীদের কাছেই পবিত্র নগরী। ইসরায়েল বরাবরই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চান ফিলিস্তিনের নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৬ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করতে পররাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশ দেন।
এ ঘোষণায় ‘পবিত্র নগরী পূর্ব জেরুজালেম’ ইসরায়েলের দখলে চলে যাবে আশঙ্কা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “যা এর ঐতিহাসিক ও আইনগত মর্যাদা, জ্যামিতিক কাঠামো এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে আবহমান আরব-ইসলামিক পরম্পরার পরিবর্তন ঘটাতে পারে।”
১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “পূর্ব জেরুজালেম সংক্রান্ত জাতিসংঘ রেজুলেশন অনুযায়ী এর আইনগত মর্যাদা সংরক্ষণ করার উপর বাংলাদেশ বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে।”
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার রক্ষা’ সংক্রান্ত কমিটিতে কূটনীতিকরা। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার রক্ষা’ সংক্রান্ত কমিটিতে কূটনীতিকরা। ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার’ মাধ্যমে ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান কাঠামো’তে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমেই কেবল এই অঞ্চলের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা হতে পারে। জেরুজালেমকে ট্রাম্পের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ইতোমধ্যে আরব ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ বিবৃতি দিয়েছে।
স্বীকৃতির প্রতিবাদে জেরুজালেম, গাজা, পশ্চিম তীর, রামাল্লা, হেব্রন, বেথেলহেম, নাবলুসসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষও হয়েছে।
ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের দল হামাস ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন ইন্তিফাদা (গণআন্দোলন) শুরুর ডাক দেয়।
সঙ্কটময় এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গত ১৩ ডিসেম্বর ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি একাত্মতা ঘোষণার জন্য ডাকা ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের যোগদান ও বাংলাদেশের ভূমিকার কথা কমিটির সভায় বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
সেনেগালের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ফোডি সিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রদূত রিয়াদ এইচ মানসুর।
তিনি বলেন, “জেরুজালেমের মর্যাদার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও রূঢ় সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
জাতিসংঘের যে সকল সদস্য রাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়ে ভূমিকা রেখেছে- সভায় তাদের সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান রাষ্ট্রদূত মানসুর।
এ সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িফ এরদোয়ান আয়োজিত ইস্তাম্বুলের বিশেষ ওআইসি সামিটের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ফেরিদূন হাদি সিনিরলিওগ্লু।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৫:০৪ ৪৪২ বার পঠিত