
এ যেন হুবহু বিস্তারক কর্মসূচি। বা সদস্যতা অভিযান। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাফল্যের কক্ষপথে ফেরত আনতে ‘পলিটিক্যাল স্ট্রাটেজিস্ট’ প্রশান্ত কিশোর যে পথের সন্ধান দিয়েছেন তা বিজেপি’র-ই সাংগঠনিক কাজকর্মের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। এ পথ বহু চর্চিত, গেরুয়া শিবিরের সাফল্যের ঠিকানা। জনসংযোগ রক্ষা করার সনাতন ‘মেকানিজম।’ ফলে প্রশ্ন উঠছে, বহু বছর নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ’র সঙ্গে ঘর করে তাঁদের ফর্মুলাই রাজ্যে প্রয়োগ করতে চলেছেন কী প্রশান্ত? রাজ্যে বিজেপির বৃদ্ধি ঠেকাতে কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে চান কী লক্ষ-কোটির পলিটিকাল স্ট্রাটেজিস্ট?
তৃণমূলের জন্য প্রশান্ত যে দাওয়াই দিয়েছেন তা হলো, দলের বিধায়ক’রা নিজের কেন্দ্রে প্রতিমাসে কমপক্ষে সাত-আট দিন কাটাক। মন্ত্রীরাও একই কাজ করুক। এতে ওই এলাকার স্থানীয় মানুষের আস্থা ফিরবে। সাধারণ জনতা ভাবতে শুরু করবে, বিধায়ক-মন্ত্রীরা শুধু মাত্র স্তাবক-পরিবৃত হয়ে থাকেন না। তাঁরা আম-আদমির মাঝেও নিজেদের হাজির করেছেন। উল্লেখযোগ্য যে, সারা দেশ জুড়ে বিজেপির বিস্তারক কর্মসূচিও প্রায় এই রকমই। গেরুয়া শিবিরের বিস্তারক কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক কার্যকর্তাকে (অবশ্যই দলের সক্রিয় সদস্য) বছরের বিভিন্ন সময় বিস্তারকের ভূমিকা পালন করতে হয়। বিস্তারক হিসাবে ওই নেতা নিজের এলাকা থেকে দূরে গিয়ে জনসংযোগের কাজ করেন। অন্তত সাত দিন বাড়ির বাইরে থেকে এই কাজ করতে হয় একজন বিস্তারককে।
বিধানসভা কেন্দ্র পিছু ১৫ জন উপযুক্ত কর্মী চেয়েছেন প্রশান্ত। তাঁরা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। মনে রাখা প্রয়োজন, একই কাজ করেন বিজেপি-র ‘পান্না প্রমুখরা।’ এই পান্না প্রমুখরাই ত্রিপুরায় সিপিএমের পাতা সাফ করে দিয়েছিল। ভোটার লিস্টের প্রতিটি পাতার ভোটারদের বাড়ি বাড়ি এই পান্না প্রমুখরা পৌঁছে গিয়েছিলেন।
কালীঘাটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে নাকি প্রশান্ত এও বলেছেন, নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক বৃত্তের আসে এলাকার বিশিষ্ট মানুষদের সঙ্গে কথা বলুক। যা আদতে বিজেপির- ই বিস্তারক পক্রিয়া। ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতারা রাজ্যে-রাজ্যে, এলাকায়- এলাকায় বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সঙ্গে দেখা করে সমর্থন আদায় করেছেন। টাফের মাধ্যমে জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। লোকসভা নির্বাচনের এক বিচর আগে বিজেপির ‘সম্পর্ক ফর সমর্থন’ এবং পরে এলাকার বিশিষ্ট মানুষের কাছে পৌঁছানোর পক্রিয়া সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, প্রশান্ত কিশোরের কৌশলে গেরুয়া আভা থাকবেই। ওকে সবথেকে বড় সুযোগ তো বিজেপি-ই দিয়েছে। সেকথা প্রশান্ত নিজেও অস্বীকার করতে পারবে না। অন্যদিকে এক তৃণমূল নেতার পাল্টা প্রশ্ন, প্রশান্তর নাম শুনে বিজেপি এত ভয় পায় কেন? ও তো এখনও কাজই শুরু করে নি। তাতেই এত ভয়।
জীবনে সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুই-ই দেখেছেন প্রশান্ত। ২০১২ যে গুজরাটে মোদীকে কঠিন নির্বাচন জিতিয়েছেন, মোদীকেই আবার ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বানাবার জন্য রাজনৈতিক অংক কষেছেন। এই সন জায়গায় তিনি সফল। পঞ্জাবে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং এর সরকার গঠনে তার ভূমিকা অনেকেই স্বীকার করেন, যেমন এবছর অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভায় যোগন মোহন রেড্ডির সরকার গঠনের পিছনেও তার মাথা কাজ করেছে বলে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, ২০১৭ সালের উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে তিনি ব্যর্থ। আবার রাবরী দাবি বলেছেন, আর জে ডি – কে ডুবিয়েছেন তিনি। কাকে ছেড়ে কাকে বিশ্বাস করবেন। আকর্ষণীয় এই ব্যক্তিত্ব প্রশান্ত কিশোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে কি দিতে পারেন সেটা সময়ের গর্ভে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪০:৫৪ ১৮৬ বার পঠিত