
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদ আন্দোলনকে গণঅন্দোলনে পরিণত করতে রাজপথে অনড় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিবিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় চরিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি।
বুধবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধী নেত্রীর ভূমিকায় নজর কাড়তে শুরু করেছেন মমতা। কলকাতা থেকে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল আর সভা-সমাবেশ করছেন তিনি। মোদি সরকারের নয়া আইনের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের জোট বাধার ডাক দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
সিএএ ঘিরে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ তীব্র হয়েছে। কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় বৃহৎ আকারে মোট ৯ পদযাত্রা ও সভা করেছে জোড়াফুল শিবির; যার প্রত্যেকটির নেতৃত্বে দেখা গেছে মমতাকে। মিছিল-মিটিং করেই শেষ নয়।
আন্দোলনের ঝাঁজ গাঢ় করতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে নির্ভয়ে বিক্ষোভে অংশ নিতে অভয় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্লামেন্টে সিএএ পাসের ভোটাভুটিতে বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বাংলার শাসক দলের আইনপ্রণেতারা।
‘প্রাণ থাকতে বাংলায় সিএএ-এনআরসি হবে না’ বলে হুংকার ছেড়েছেন মমতা। ইতিমধ্যেই জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) স্থগিত করে দিয়েছেন। আটক কেন্দ্র ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মমতা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না।
প্রতিটি পদযাত্রা বা সভায় নিয়ম করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে তাকে। কেন্দ্র বিভেদের রাজনীতির স্বার্থেই সিএএ-এনআরসি করে ভারত ভাগের চক্রান্ত করছে বলে দাবি মমতার। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ফের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেবে দেশবাসী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ ভারতের সংস্কৃতি। বাংলা যার অন্যতম আধার বলে বিবেচিত। দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা। সব ধর্মের মানুষ এ রাজ্যে মিলেমিশেই থাকেন।
মোদিবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই বৈচিত্র্যকেই পুঁজি করতে চাইছে তৃণমূল। কলকাতা থেকে জেলা, গত কয়েকদিনে যেখানেই সিএএ-বিরোধী মিছিল করেছেন মমতা, সেখানেই সর্বধর্মের প্রতিনিধিকে লক্ষ্য করা গেছে। বারবার নেত্রীর মুখে উঠে এসেছে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী, মহাত্মা গান্ধী, বিদ্যাসাগর, রামমোহনের নাম।
ধর্ম নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে কলকাতায় দলের মিছিল কখনও ধর্মতলা থেকে জোড়াসাঁকো, আবার কখনও বিবেকানন্দের বাড়ি থেকে বেলাঘাটায় গান্ধী ভবন পর্যন্ত গেছেন। স্বয়ং নেত্রী কাঁসর বাজিয়েছেন। সহমর্মিতা জানাতে ম্যাঙ্গালোরে সিএএ প্রতিবাদের জেরে নিহতদের পরিবারকে তৃণমূল আর্থিক সহায়তা করেছে।
উত্তরপ্রদেশে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখাও করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। নতুন আইনের বিরোধিতায় বাংলার নানা জায়গায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল। মুর্শিদাবাদে তা ভয়ংকর রূপ নেয়। শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করতে আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
শুধু দলগতই নয়, মোদি সরকার বিরোধিতায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও এগিয়ে দিতে সাহস জোগাচ্ছেন ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনীতির চূড়ায় পৌঁছানো মমতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩১:৪৮ ২১২ বার পঠিত