মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ গঠনেও পাশে থেকেছে ভারত। তবে তার একটাই দুঃখ, ‘দিদিমণি তিস্তার পানি দিলেন না।’ বুধবার সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসস্থান গণভবনে ভারতের এক দল সাংবাদিককে আপ্যায়নের সময় এভাবেই আক্ষেপ করেন শেখ হাসিনা।
এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু ভারতের যে প্রশাসনিক পরিকাঠামো, তাতে রাজ্যকে বাদ দিয়ে (অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ এবং মমতাকে বাদ দিয়ে) কিছু করা সম্ভব নয়। তার কথায়, ‘ভারতের যা সিস্টেম, তাতে প্রদেশকে বাদ দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তাও আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং করার পরামর্শও দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন,‘আমি তো ভারতকে ড্রেজিং করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তা হলে পানির অভাব হবে না। নদীর জলধারণের ক্ষমতা বাড়বে। বন্যাও হবে না।’
হাসিনাকে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গে জানানো হয়, উত্তরবঙ্গের আত্রেয়ী এবং দক্ষিণবঙ্গের চূর্ণী— দুটি নদীই বাংলাদেশে ঢুকে আবার পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছে। এর মধ্যে আত্রেয়ী নদীতে খাল কেটে সব জল বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার চূর্ণী নদীতে বাংলাদেশের কারণে দূষণ ছড়াচ্ছে। কিন্তু ভারতের এই অজুহাত মানতে চাননি হাসিনা।
খানিকটা হালকা সুরেই তিনি বলেন, ‘এ সব হচ্ছে তিস্তার পানি না–দেওয়ার অজুহাত।’তিস্তা প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা দুঃখ আছে। দিদিমণি তিস্তার পানি দিলেন না। যখন পানি চাইলাম, তখন উনি বললেন, বিদ্যুৎ দেব। আমি বললাম, তথাস্তু। যা পাওয়া যায়, তাই দিন।’
এ সময় বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকা আত্রেয়ী ও চূর্ণী নদীর পানি নিয়ে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করে হাসিনা বলেন, ‘এ সবই তিস্তার পানি না-দেওয়ার অজুহাত!’
তবে তিস্তা নিয়ে আশা ছাড়ছেন না বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মমতা কিন্তু পানি দিতে নিষেধ করেননি। উনি বলেছেন, দেবেন। আমরা সেই আশায় আছি।’আর সেই আশাতেই তিস্তার শাখা নদীগুলিতে ড্রেজিং করছে ঢাকা। যাতে পানি আসলে দেরি না-করে তা ব্যবহার করা যায়।
যদিও ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তিই দু’দেশের সম্পর্কের শেষ কথা নয়। তিস্তা নিয়ে জটিলতা একটা বাস্তবতা। কিন্তু অন্য দিকগুলিতে সহযোগিতা সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কথায়, ‘পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার দিল্লির সঙ্গে যে সহযোগিতা করেছে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না।’
শেখ হাসিনা নিজেও বলেন, ‘ঢাকা-কলকাতা বাস, মৈত্রী আর বন্ধন ট্রেন হয়েছে। ট্রানজিট দিয়েছি। চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিয়েছি। কোনও বিষয়ে আমরা কার্পণ্য করিনি।’
এ বছরের শেষে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। বিরোধীরা যে তিস্তা চুক্তিকে ভোটে ‘ইস্যু’ করবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন হাসিনা। ফলে তার কাছে বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বইকি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলাদেশের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবাইদুল কাদেরও বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন এসে যাচ্ছে। জনগণের কাছে যেতে হবে। মমতা যদি তিস্তা চুক্তির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন। তাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উনিও তো বাঙালি। বিষয়টির একটি সম্মানজনক, যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত সমাধান করা হোক।’
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৭:২৬ ৪১৫ বার পঠিত