
১০ মে থেকে সারা দেশে সীমিত আকারে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, যেসব মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানছেন না। যাঁরা দোকানপাট খুলেছেন, তাঁদের মধ্যেও একই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। কারণ, লকডাউন চলা অবস্থায়ই সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী; লকডাউনমুক্ত পরিবেশে লোকজন সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে যথেচ্ছ চলাফেরা করলে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে। তা যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৭ মে অন্তত ১২ ধরনের নির্দেশনা প্রকাশ করে, যা শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাটের মালিক-কর্মী ও ক্রেতাসাধারণের মেনে চলা উচিত।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদকেরা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে উদ্বেগজনক চিত্র দেখতে পেয়েছেন। যেমন ইসলামপুর, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি, পান্থপথ, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় এলাকার খোলা দোকানপাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষেরই ডিএমপির নির্দেশনা মেনে চলায় গাফিলতি লক্ষ করা গেছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা ও কেনাকাটা সেরে যথাসম্ভব দ্রুত ঘরে ফিরে যেতে হবে—এমন সতর্কতার ভাব অধিকাংশ ক্রেতার মধ্যে ছিল না। মুখের মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে অনেক দোকানের বিক্রয়কর্মীদের। এ ছাড়া নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেট ইত্যাদি এলাকায় মার্কেট বন্ধ থাকলেও ফুটপাতে ভাসমান বিক্রেতাদের সঙ্গে ক্রেতাদের শারীরিক দূরত্ব লুপ্ত হয়েছে।
দোকানপাট খোলার প্রথম দিনেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের এমন শৈথিল্যের ভাব দুশ্চিন্তার বিষয় আরও একটা কারণে। করোনাভাইরাসের অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যাঁরা যথেষ্ট সচেতন নন (তাঁদের সংখ্যা অনেক), তাঁরা যখন দেখতে পাচ্ছেন যে অনেকেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করাসহ স্বাস্থ্যবিধির অন্য বিষয়গুলো মানছেন না, তখন তাঁদের মধ্যেও এই ক্ষতিকর প্রবণতা সংক্রমিত হতে পারে। নেতিবাচক ব্যাপারে, বিশেষত নিয়ম-বিধান অমান্য করার ক্ষেত্রে অনুকরণ-প্রবণতা আমাদের সমাজে যথেষ্ট লক্ষ করা যায়।
শুধু দোকানপাটেই নয়; রাস্তাঘাটেও ভিড় বাড়ছে, শারীরিক দূরত্ব কমছে। গতকাল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে বিপুলসংখ্যক মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে চলাচলের চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে কর্মজীবী মানুষ রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। সংক্রমণের কী বিরাট ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কর্মস্থলে ফিরছেন, তা ফুটে উঠেছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে মানুষের গাদাগাদি ভিড়ের ছবিতে।
স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের এই চিত্র পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে এত বেশি সংখ্যক মানুষ কোভিড-১৯ রোগী হবেন যে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়াসহ পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে দুরূহ হবে।
সেটা যাতে না হয়, সে জন্য ডিএমপিকে তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে; বেশ জনসমাগম হয় এমন জায়গাগুলোতে পুলিশের নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিত। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি সারা দেশে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারি প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, দোকানপাট ও মার্কেটের মালিকদের সমিতি, সামাজিক-নাগরিক সংগঠন, সচেতন নাগরিক, সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সবাইকে তৎপর হতে হবে
বাংলাদেশ সময়: ৪:২৫:৫২ ১১৬ বার পঠিত