গুড় তৈরির প্রধান উপাদান আখ ও খেজুরের রস। তালের রস দিয়েও গুড় হয়। তবে তার চল কম। কিন্তু দেশের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গাছের রস ছাড়াই এমন গুড় তৈরি করছেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
জানা যায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভা ও এর আশপাশে অনেক ভেজাল গুড়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে চিনির সঙ্গে চুন, ফিটকিরি, ডালডা ও রং মিশিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এমনকি কাঠের গুঁড়া, পচা মিষ্টির রস মেশানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে। রোজার সময় গুড়ের শরবতের চাহিদা বেশি থাকায় এই ভেজাল সামগ্রীর উৎপাদনও বেড়েছে। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা শুধু ভেজাল গুড় তৈরি করছেন না, ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে অন্যান্য খাবারও তৈরি করছেন। এ সময়ে মসলা, মুড়ি, সেমাই ও সুজির চাহিদা বেশি থাকে। সেমাই ও সুজিতে ভেজালের পরিমাণ এতটা বেশি যে অনেক ভোক্তা বাজার থেকে এসব পণ্য কেনা ছেড়েই দিয়েছেন।
বাজারে বর্তমানে চিনি ও গুড়ের দামে খুব হেরফের নেই। কিন্তু ভেজালকারীরা চিনির সঙ্গে আটা, ডালডা, ফিটকিরি, রং ইত্যাদি মিশিয়ে ওজন বাড়ায়। ফলে এক কেজি গুড়ের নামে যা তৈরি করে, তার খরচ অনেক কম পড়ে।
আরও জানা যায়, গত বছর অক্টোবরে র্যাব আড়ানি এলাকার চারটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল গুড় নদীতে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে ভেজাল গুড় তৈরি ও বিক্রি বন্ধ হয়নি। বর্তমানে এলাকায় শতাধিক কারখানা চালু আছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর স্বীকার করেছে, ওই কারখানাগুলো ভেজাল গুড় তৈরি করছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে ভেজাল গুড় তৈরি কেবল রাজশাহী জেলা বা বাঘা উপজেলাতেই সীমিত নেই। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত রোববার নাটোরের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়ায় একটি ভেজাল গুড়ের কারখানায় র্যাব অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল গুড় জব্দ এবং গুড় ব্যবসায়ী আছাদ সোনারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
ভেজাল খাদ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণে দেশে আইন আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। আছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। তাদের নাকের ডগায় এসব ভেজাল গুড় কীভাবে তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে? এসব কারখানায় শুধু অভিযান নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক গুড় উৎপাদনকারী সব কারখানা উচ্ছেদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১:১৯:৩০ ১৫১ বার পঠিত