
মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সবসময় সোচ্চার থাকতেন রাজু আহম্মেদ (৩০)। নিজের ফেসবুক আইডিতে সব সময় মাদকবিরোধী পোস্ট দিতেন। প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তা আর রাজনৈতিক নেতাদেরও ছবি পোস্ট করতেন নিয়মিত।
মাদকবিরোধী প্রচারণার জন্য নিজেই খুলেন একটি ফেসবুক পেজও। সেখানে মাদক কারবারিদের প্রতিরোধের ডাক দিতেন। আর সর্বত্র পরিচয় দিতেন র্যাবের সোর্স বলে। কিন্তু সেই রাজু আহম্মেদই শনিবার দিনগত গভীর রাতে গ্রেফতার হয়েছেন বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ র্যাবের হাতেই।
র্যাব-৫ এর রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল শনিবার দিবাগত গভীর রাতে নিজের বাড়ি থেকেই বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ রাজুকে গ্রেফতার করেছে।
রাজু রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের আবদুল মান্নান সেন্টুর ছেলে।
র্যাব-৫ এর দেয়া তথ্যানুযায়ী, অভিযানে রাজুর বাড়িতে পাওয়া গেছে ৮০০ গ্রাম হেরোইন ও ৩০০টি ইয়াবা বড়ি। এর আগে ২০১৫ সালেও ফেনসিডিলসহ একবার র্যাবের হাতেই গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজু। তারপর কিছুদিন কারাগারে ছিলেন। এক বছর পর জেল থেকে বের হয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে আড়াল করতে তিনি ফেসবুকে মাদকবিরোধী প্রচারণা শুরু করেন। নিজেকে র্যাবের সোর্স পরিচয় দিয়ে গোদাগাড়ীর অন্য মাদক কারবারিদেরও ভয় দেখাতেন ধরিয়ে দেবে বলে। আদায় করতেন টাকা।
র্যাব-৫ এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এটিএম মাইনুল ইসলাম বলেন, মাদকদ্রব্যসহ রাজু আগে একবার আটক হয়েছিল জানতে পেরে তার পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি চলে। শনিবার রাতে আমরা খবর পাই, পাঁচ কেজি হেরোইন সীমান্ত এলাকা থেকে তার কাছে আসবে। তখন সাদা পোশাকে তাকে অনুসরণ করি। টের পেয়ে রাজু পালিয়ে যায়। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আসে।
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, পরে আমরা নিশ্চিত হই যে সে হেরোইন ও ইয়াবা নিয়েই বাড়ি ঢুকেছে। তাই প্রতিবেশী চার-পাঁচজন লোক নিয়ে আমরা তার বাড়িতে অভিযান শুরু করি। তার ঘরেই পাওয়া যায় ৮০০ গ্রাম হেরোইন ও ৩০০ পিস ইয়াবা বড়ি। আমরা তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করি।
এটিএম মাইনুল ইসলাম জানান, রোববার বিকালে রাজুকে গোদাগাড়ী থানায় হস্তান্তর করে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি তারা নিজেরাই তদন্ত করতে চান। রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
এদিকে আটক হওয়ার আগে র্যাবের সামনে থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে ঢুকেই রাজু তার নিজের ফেসবুক আইডিতে দুটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটিতে তিনি লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে কেউই খারাপ হয়ে জন্মায় না। পরিবেশ আর পরিস্থিতি জীবনটাকে পাল্টে দেয়।’
আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সব অপরাধের ক্ষমা আছে! কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার কোনো ক্ষমা নাই।’
এ দুটি স্ট্যাটাস দেয়ার কিছুক্ষণ পরই র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন গোদাগাড়ীর অন্যতম শীর্ষ এই মাদক কারবারি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৫:২৫ ১৮৮ বার পঠিত