
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের এক জন সহকারী প্রকৌশলীসহ ছয় জনকে আটক করেছে পুলিশ। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হত্যার ঘটনাটি পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র্যাব ও পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাঠে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুনিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতেই আছে। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে। নিহত প্রকৌশলীর সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী সেলিমসহ দুই জন সহকারী প্রকৌশলীকে দুই দিন আগে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ঘটনার দিন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে বহনকারী সিটি করপোরেশনের গাড়িচালককে আটক করা হয়েছে। গাড়িচালকের দেওয়া তথ্য থেকে এ হত্যায় সরাসরি জড়িত সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার দিন ১১ মে সকালে পিপিই পরিধান করা তিন জন ঐ গাড়িতে ওঠেন। গাড়িতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে হত্যা করে লাশ তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকার উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ৫ ব্রিজের কাছে জঙ্গলে ফেলে দেয়।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রভাবশালী এক নেতাও জড়িত রয়েছে। মূলত সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের শত কোটি টাকা বিল আটকে রাখার জন্যই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে এক জন সত্ ও মেধাবী প্রকৌশলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ উঠেছে। নগরবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। অনেকেই বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের শীর্ষ এক জন প্রতিনিধির হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত রয়েছে। আসামিরা ধরা না পড়ায় দিন যতই পেরিয়ে যাচ্ছে সন্দেহের তির সিটি করপোরেশেনের দিকেই যাচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। ঠিকাদারদের শত কোটি টাকার ফাইল আটকে রাখা ও সিটি করপোরেশনের অনেক দুর্নীতির খবরও জানতেন প্রকৌশলী দেলোয়ার। বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে খোদ মেয়রই দেলোয়ারকে ছয় মাসের ওএসডি করে রাখেন। ঘটনার ছায়া তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে এক জন সহকারী প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্টতা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে আরো পাঁচ জন জড়িত রয়েছে।
আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিবের আজ জন্মদিন
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, দেলোয়ার হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই সহকারী প্রকৌশলীসহ কয়েকজন ঠিকাদারদের সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের শীর্ষ এক জন প্রতিনিধির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কারণ ঐ জনপ্রতিনিধির নির্দেশনার সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো টেন্ডার কাজ হয় না। কারণ যারা ছোটো ঠিকাদার রয়েছে তাদের লাইসেন্সে ১ কোটি টাকার বেশি কাজ দেওয়া হয় না। আর যারা সিন্ডিকেটে রয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই ৫ কোটি টাকার কাজ পান। কয়েকজন ছোটো ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, ঐ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিনা টেন্ডারেও কোটি কোটি টাকার কাজ করেছেন ঐ সিন্ডিকেটের ঠিকাদাররা। তারা বলেন, ঐ ফাইলগুলো আটকে রাখেন প্রকৌশলী দেলোয়ার। এসব কারণেই তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১১ মে দুপুরে দিয়াবাড়ী ভেড়িবাঁধের জঙ্গল থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৪:০৮ ১৭০ বার পঠিত