নিউজটুনারায়ণগঞ্জ: বৈশ্বিক করোনা মহামারী আর ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেও বিনম্র শ্রদ্ধায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পরিমিত পরিসরে আজ ব্রাসিলিয়ায় পালিত হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী। গত বছরের মত এবারও ব্রাজিলিয়ার কয়েকটি স্থানীয় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে জাতীয় শোক দিবস উদযাপনের পরিকল্পনা থাকলেও ব্রাজিলের COVID-19 মহামারীর প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহ অবস্থার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে এবারের জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয়। উল্লেখ্য গত বছর দুইটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে জাতীয় শোক দিবস পালন করার পর মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে এ বছর অন্তত ছয়টি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে দিবসটি পালন করার পরিকল্পনা এবং তদানুযায়ী বছরের শুরুতেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। তবে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে ব্রাজিলিয়ার সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবং ব্রাজিলিয়ার গভর্নর কর্তৃক মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সকল প্রকার গণ-জমায়েত নিষিদ্ধ থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারবর্গের উপস্থিতিতে দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে এবারের জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।
০২। সকাল দশটায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে সূচিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে তাঁর সাথে শাহাদাত বরণকারী সকলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দূতাবাস পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন।
০৩। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে দূতাবাস পরিবারের শিশু-কিশোররা “বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক” চিত্রাংকন ও রচনা লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা রচনা পাঠ করে সবাই বিমোহিত হন। “বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশের জন্ম হত না”— শুধুমাত্র বাবা-মায়ের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনে বড় হওয়া এক শিশুর লেখনী মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে আবেগপ্রবণ করে দেয়।
০৪। জাতীয় শোক দিবস পালন কর্মসূচীর তৃতীয় অংশের শুরুতে পবিত্র কোরান থেকে পাঠ এবং বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগষ্টে নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, মহান ভাষা আন্দোলনসহ গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সকলের আত্মার মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করে এবং বিদ্যমান করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর মানুষকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে নির্মিত তিনটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
০৫। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা মহান স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরনীয় অবদানের উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ভেঙ্গে যাওয়া অবকাঠামো নির্মাণ এবং আর্থিক খাত পুনর্গঠনে তাঁর সাহসী অবদান তুলে ধরেন। এছাড়া অল্পসময়ের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক সার্ভিস এবং সামরিক বাহিনী গঠন বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ফসল বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
০৬। রাষ্ট্রদূত মোঃ জুলফিকার রহমান তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেবার জন্য বঙ্গবন্ধুকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত নানা পদক্ষপের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দেয়ায় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত আরো উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুকে সঠিক ভাবে জানতে হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কেও পড়াশুনা ও গবেষণা করতে হবে। রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে যে কোন অপপ্রচার ও তথ্য বিকৃতির বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
০৭। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড শুধুমাত্র কয়েকজন বিপথগামী সৈনিকের কাজ নয় বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত জুলফিকার তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। একই সাথে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আরো বেশী নিবেদিত হয়ে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান।
০৮। সবশেষে মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক “বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক” চিত্রাংকন ও রচনা লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের মাঝে পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এবারের জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৪:২০ ১১৫ বার পঠিত