১৪ বছর জেল খাটার পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মুক্তি

প্রথম পাতা » আইন আদালত » ১৪ বছর জেল খাটার পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মুক্তি
মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০



---

কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশের ১৪ বছর পর কারাগারের কনডেম সেল থেকে মুক্ত হয়েছেন। ৮ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছিল হুমায়ুন কবিরের। তখন থেকেই তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিলে। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ২০০৬ সালে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

বিচারিক কার্যক্রমের এক পর্যায়ে হাইকোর্টে আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগ হুমায়ুন কবিরের আপিল মঞ্জুর করে এ মামলা থেকে তাকে খালাস দেন।

তার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ বলেন, আর কোনো মামলা না থাকলে এখন তার মুক্তি পেতে কোনো বাধা নেই।

নথি থেকে ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে এ আইনজীবী জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী বেলা সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করে তার অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডয়রি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।

ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এ সময় আরও ৫ থেকে ৬ জন লোক ছিল সেখানে। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলে, সে শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেয়নি। পরে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে লাকসাম থানায় এজাহার দায়েরের পর ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে পুলিশ।

ওই বছরের ৪ জুলাই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

এ মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। নিয়ম অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং হুমায়ুন জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডদেশ বহাল রাখেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন হুমায়ুন। এ আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার তার আপিল মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আদালতে জেল আপিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন শিশুটি তার খালাত বোনের মেয়ে। শিশুর বাবা তার কাছে ১৬০০ টাকা পেতেন। কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষীতে বলেছেন তিনি হুমায়ুন কবিরকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কিনা। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।

সর্বশেষ আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, এ মামলাটিতে ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৩:০৪   ১০৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আইন আদালত’র আরও খবর


এমসি কলেজে দলবেঁধে ধর্ষণ: আদালত পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন
পিকে হালদারের সহযোগী শঙ্খ ব্যাপারী কারাগারে
নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি
আর্থিক বিচারে এখতিয়ার বাড়লো সিভিল কোর্টের
সাবেক বিচারক শাহবাগ থানায় মেয়ের বিরুদ্ধে জিডি করলেন
কারাগারে ফরিদপুরের দুই ইউপি চেয়ারম্যান
নারী সাক্ষীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় বিচারক প্রত্যাহার
রাজধানীতে মা-ছেলে হত্যা মামলায় স্বামীসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
বিকৃত যৌন আচরণের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা
মাদক মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিচার শুরু

আর্কাইভ