ট্রাম্পের হাতে এখনো একটি কৌশল রয়ে গেছে, কি ঘটতে যাচ্ছে ৬ জানুয়ারি?

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ট্রাম্পের হাতে এখনো একটি কৌশল রয়ে গেছে, কি ঘটতে যাচ্ছে ৬ জানুয়ারি?
বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০



---

অবশেষে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটেও জো বাইডেনের পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গেছে। তিনি ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। তবে নির্বাচনে এখনো পরাজয় না–মানা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘খেলা শেষ হয়ে যায়নি।’

মঙ্গলবার সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককোনেল নিরবতা ভেঙে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যিনি এতদিন চুপ করে ছিলেন, সেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ।

তবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের পর এখনো চুপ করে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এখনো পরাজয় স্বীকার করেননি, বরং নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এই অভিযোগে করা তার মামলাগুলো সব একের পর এক বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালতে খারিজ হয়ে গেছে।

তবে ট্রাম্প শিবির বলছে আইনী লড়াই চলতে থাকবে, এবং তার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবেন - যদিও সুপ্রিম কোর্টে এরকম কোন আপিল শোনা হবে কিনা এবং তা নির্বাচনী ফল উল্টে দিতে পারবে কিনা - তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

তাহলে কি ট্রাম্পের রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়াই ভবিতব্য? নাকি তার হাতে আরো চার বছর হোয়াইট হাউসে থেকে যাবার কোন কৌশল এখনো রয়ে গেছে?

ট্রাম্পের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং অনুগতদের একটি দল এখনো মনে করছেন - এখনো একটি পথ আছে। সেই নাটক মঞ্চস্থ হবে ৬ই জানুয়ারি।

কি ঘটতে যাচ্ছে ৬ই জানুয়ারি?

---

নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: বিবিসি বাংলা

ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের যে ফল জানা গেছে সোমবার - সেটা এখনো ‘আনুষ্ঠানিক’ ফল নয়। এই ভোটের ফল পাঠানো হবে ফেডারেল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং আগামী ৬ই জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করা হবে কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে। ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ই জানুয়ারির ঘটনাবলী হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোটের ফল উল্টে দেবার ক্ষেত্রে ‘শেষ সুযোগ’ এনে দিতে পারে।

এরকম একটা প্রয়াস নিচ্ছেন কয়েকজন সেনেটর এবং কংগ্রেস সদস্য। তারা আরিজোনা পেনসিলভেনিয়া, নেভাদা, জর্জিয়া ও উইসকন্সিন - এই রাজ্যগুলোতে অবৈধ ভোট ও জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন - যাতে অন্তত একজন সিনেটরের স্বাক্ষর থাকবে। এর লক্ষ্য হবে ওই রাজ্যগুলোর ভোট ‘ডিসকোয়ালিফাই’ বা বাতিল করা।

আলাবামা রাজ্যের রিপাবলিকান সেনেটর মো ব্রুকস এদের একজন। মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলছেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সেদিন সুপ্রিম কোর্টসহ যেকোন আদালতের বিচারকের চেয়ে বড় ভুমিকা আছে কংগ্রেস সদস্যদের। “আমরা যা বলবো তাই হবে, সেটাই চূড়ান্ত” - বলেন তিনি।

এধরনের অভিযোগ উঠলে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফলাফল প্রত্যয়ন করতে অস্বীকার করলে কী হবে - তা নিয়ে মার্কিন বিশ্লেষকরা নানা রকম মতামত তুলে ধরছেন।

সিনেটর মো ব্রুকস বলছেন, “আমার এক নম্বর লক্ষ্য হলো আমেরিকার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা - যা ভোটার জালিয়াতি বা ভোট চুরিকে খুব সহজে মেনে নিচ্ছে - তা মেরামত করা। আর এটা থেকে একটা বোনাস মিলে যেতে পারে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে জিতে গেলেন। কারণ আপনি যদি অবৈধ ভোটগুলো বাদ দেন, এবং যোগ্য আমেরিকান নাগরিকদের আইনসঙ্গত ভোটগুলোই শুধু গণনা করেন - তাহলে তিনিই জিতেছেন।”

কিন্তু এরকম কোন প্রক্রিয়া হবে জটিল এবং দীর্ঘ। প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দু’ঘন্টা করে বিতর্ক এবং ভোটাভুটি হতে হবে। কোন একটা রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট বাতিল করতে হলে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ এবং রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটকে একমত হতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর পর কখনো এমনটা হয়নি।

অনুমান করা যায়, ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভোট বাতিলের চেষ্টা অনুমোদন করবে না। তা ছাড়া রিপাবলিকান কয়েকজন সিনেটরও এভাবে ভোট বাতিলের প্রয়াস জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা এ চেষ্টার বিপক্ষে ভোট দিলেই জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে।

ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ভুমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

৬ জানুয়ারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন কংগ্রেসের সেই অধিবেশনে সভাপতি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। কারণ তিনিই সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটের খামগুলো খুলবেন, এবং তার যোগফল ঘোষণা করবেন।

১৯৬০ সালে রিচার্ড নিক্সন এবং ২০০০ সালে আল গোরকে এভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে তাদের নিজেদের পরাজয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর বিজয়কে প্রত্যয়ন করতে হয়েছিল। তারা এটা করতে গিয়ে তাদের নিজেদের দলের আইনপ্রণেতাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেছিলেন। মাইক পেন্সও কি তাই করবেন?

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট যে ভুমিকা পালন করেন তার প্রতি লোকে এতদিন কোন দৃষ্টি দেয়নি, এটা নিয়ে ভাবেওনি। কিন্তু যেহেতু প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প - তাই আপনাকে সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে” - বলছেন গ্রেগরি বি ক্রেইগ - যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় হোয়াইট হাউসের একজন আইনজীবী ছিলেন।

পেন্সের সামনে উভয়-সংকট?

---

ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ছবি: বিবিসি বাংলা

এতদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মি. পেন্স একদিনে যেমন ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ছিলেন, তেমনি তিনি আইন মেনেও চলেছেন। নির্বাচনের পর থেকে পেন্স ট্রাম্পকে সাহায্য করার ব্যাপারে মিশ্র বার্তা দিয়ে চলেছেন। প্রথম দিকে তিনি ভোট জালিয়াতির দাবিগুলো সমর্থন করার জন্য ট্রাম্প সমর্থকদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর ভোট বাতিল করার জন্য টেক্সাসের এ্যাটর্নি জেনারেলের করা মামলার প্রশংসা করেছেন - যদিও সে মামলা খারিজ হয়ে গেছে।

সমস্যা হলো, মাইক পেন্স নিজেই নাকি ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চান। ফলে তার সামনে এখন উবয় সংকট। তিনি কি এ নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে নিয়ে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে তার নিজের দলের ভোটারদের বিরাগভাজন হবার ঝুঁকি নেবেন? নাকি রিপাবলিকানদের বাধ্য করবেন ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিতে?

যারা ৬ই জানুয়ারির দিকে তাকিয়ে আছেন - তাদের প্রশ্ন সেটাই।

বাংলাদেশ সময়: ৯:২০:১৩   ৯০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ