সৌদিতে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার

প্রথম পাতা » আইন আদালত » সৌদিতে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার
সোমবার, ২১ মে ২০১৮



---সৌদি আরবে কাজ করতে যান যেসব বাংলাদেশি নারী শ্রমিক, তারা প্রতারণা, নিয়মিত বেতন না পাওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং ভাষা সমস্যাসহ নানা ধরনের বিপদের শিকার হচ্ছেন। রিক্ত হাতে দেশে ফিরে তারা নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার জানান, এই সব সমস্যার কিছু অংশ বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। সৌদি নিয়োগকর্তাদের তরফ থেকেও নারী শ্রমিকরা নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

যেসব কারণে সৌদিতে নারী শ্রমিকরা গিয়ে বঞ্চনার শিকার হন। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এখানে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে লেনদেন

নিয়ম অনুযায়ী সৌদি নিয়োগকর্তা যখন তার দেশের রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে গৃহকর্মী চান, তখন তিনি সেই এজেন্সিকে প্রয়োজনীয় অর্থ দেন। সেই এজেন্সি আবার বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিককে কোনো অর্থ লেনদেন করতে হয় না।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্সিগুলো আর্থিক মুনাফার জন্য শ্রমিকদের ‘বিক্রি’ করে দিচ্ছে। জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকাও আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে।

তিন মাসের দায়িত্ব

চুক্তি অনুযায়ী চাকরির প্রথম তিন মাস পর্যন্ত শ্রমিকের দায়দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সিকে বহন করতে হয়। কিন্তু তারপর গৃহকর্মী শ্রমিকের দায়দায়িত্ব আর রিক্রুটিং এজেন্সির থাকে না।

এটি মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে বলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পুরুষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে এটা যদি দু’বছর হতে পারে, তাহলে নারী শ্রমিকের বেলায় এটি কেন তিন মাস হবে তা ঠিক যুক্তিগ্রাহ্য নয়।

চুক্তির দুর্বলতা

প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, ২০১৫ সালে শ্রমিক পাঠানোর চুক্তিতে নানা ধরনের দুর্বলতা রয়েছে যার খেসারত দিতে হচ্ছে নারী শ্রমিকদের। দেশে ফিরে আসার জন্য অনেককেই বাড়ি থেকে অর্থ চেয়ে পাঠাতে হচ্ছে। এখনও বহু নারী রিয়াদ এবং জেদ্দার ‘সেফহোমে’ বসবাস করছেন এবং বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এছাড়া বিশালসংখ্যক নারী অবৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যান কাজ করার আশায়। তারা যখন বিপদে পড়েন তখন তাদের সাহায্য করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

রিয়াদে ১১ মাস গৃহকর্মের কাজ করে দেশে ফিরে এসেছেন সুনামগঞ্জের তসলিমা আক্তার। তিনি জানান, ১১ মাস কাজ করার পরও পাওনা বেতন পাননি। দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করায় ‘কফিল’ (নিয়োগকর্তা) উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এজেন্সিকে দেয়া অর্থ তাকে ফেরত দিতে বলে।

নির্যাতন

দেশে ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ যেসব বাড়িতে গৃহকর্মী পদে তাদের নিয়োগ করা হয় সেগুলো প্রায়শই যৌথ পরিবার। ফলে সেখানে কাজের চাপ থাকে মাত্রাতিরিক্ত।

গৃহকর্মী শ্রমিক তসলিমা আক্তার যে বাড়িতে কাজ পেয়েছিলেন সেখানে লোক ছিল ৪৫ জন। যে বাড়িতে শ্রমিকদের কাজ করতে হয় সেখানে প্রায়ই তারা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন। দেশে ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের অনেকেরই দেহে থাকে ক্ষতচিহ্ন। মন থাকে ভাঙা।

কিন্তু প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদার বলছেন এটি সৌদি আরবে কর্মরত নারী শ্রমিকদের ২০%-এর সমস্যা। বাকি ৮০% নিরাপদেই আছেন বলে তিনি দাবি করেন।

নমিতা হালদার জানান, ‘সৌদি সরকারের সাথে বৈঠকে গৃহকর্মী নির্যাতন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায় তারা আমাদের জানিয়েছে যে ৪৫% নারী শ্রমিক চুক্তি ভঙ্গ করে দেশে ফেরত আসে এবং সেটা ঘটে তিন মাসের ভেতরে। বাংলাদেশের সেফ হোমে রয়েছে এমন অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি যে তাদের পক্ষ থেকে করা শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সব সময় সত্যি না। অনেককেই জেরা করে দেখেছি যে তারা মারধরের বানোয়াট অভিযোগ করেছে।’

ভাষা সমস্যা

সৌদি আরবে যেসব নারী শ্রমিক যাচ্ছেন তাদের অনেকেরই আরবি ভাষার নূন্যতম জ্ঞানও নেই বলে নমিতা হালদার উল্লেখ করেন। ফলে গৃহকর্তার সাথে কথাবার্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রায়ই আকার ইঙ্গিতের সাহায্য নিতে হয় গৃহকর্মীদের।

তিনি জানান, সৌদি আরবে শ্রমিকদের জন্য আট ভাষার যে হটলাইন চালু রয়েছে, তাতে ছয় মাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মোট তিনটি কল লগ করা হয়েছে। এই ভাষাগত জটিলতা দূর করার জন্য ৭০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরবিভাষী প্রশিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মধ্যপ্রাচ্যে যেসব নারী কাজ করতে যাবেন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা তাদের থাকে, তারা যেন আরবিতে নূন্যতম কথাবার্তা চালাতে পারেন, তাদের বয়স যেন ২২ থেকে ৪৫ বছর হয় এবং সৌদি পরিবারে কাজ চালানোর জন্য তাদের যেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:২১   ১৩২১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আইন আদালত’র আরও খবর


এমসি কলেজে দলবেঁধে ধর্ষণ: আদালত পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন
পিকে হালদারের সহযোগী শঙ্খ ব্যাপারী কারাগারে
নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি
আর্থিক বিচারে এখতিয়ার বাড়লো সিভিল কোর্টের
সাবেক বিচারক শাহবাগ থানায় মেয়ের বিরুদ্ধে জিডি করলেন
কারাগারে ফরিদপুরের দুই ইউপি চেয়ারম্যান
নারী সাক্ষীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় বিচারক প্রত্যাহার
রাজধানীতে মা-ছেলে হত্যা মামলায় স্বামীসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
বিকৃত যৌন আচরণের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা
মাদক মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিচার শুরু

আর্কাইভ