ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাথেও সালভিনির আপত্তি সত্ত্বেও সমুদ্র থেকে উদ্ধার হওয়া ৬৭ অভিবাসীকে বন্দরে নামতে ভূমিকা রেখেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা। এর আগে অভিবাসীদের বন্দরে নামতে না দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে ছিলেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
পরে ওই জাহাজটি দেশটির যোগাযোগমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই গত সোমবার থেকে বন্দরে নোঙর করেছিল। এই অচলবস্থা নিরসনে প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা বৃহস্পতিবার ফোন করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে।
শুক্রবার প্রেসিডেন্টের অনুরোধে বন্দরে উদ্ধারকারী কোস্টগার্ডের জাহাজে থাকা ব্যক্তিদের বন্দরে নামার অনুমতি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্টে।
ইতালির রাজনৈতিক বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ বিরল ঘটনা আর অভিবাসীদের নিয়ে এই প্রথম। আর এ ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করছে।
এদিকে অন্য আরেকটি জাহাজ ৪৫০ জন অভিবাসী নিয়ে ইতালির সমুদ্রসীমায় অবস্থান করছে। ইতালিতে কালেভাদ্রে প্রেসিডেন্ট সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করেন। এবার অনড় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বন্দরে উদ্ধারকৃতদের নামতে দেওয়ার বিষয়ে ভূমিকা রাখলেন সার্জিও মাত্তারেল্লা।
অভিবাসী হতে ইচ্ছুক ওই ব্যক্তিদের লিবিয়া উপকূল থেকে একটি ইতালীয় পতাকাবাহী জাহাজ গত সোমবার উদ্ধার করেছিল। তারপর তাদেরকে কোস্টগার্ডের জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। সেই জাহাজ ভেড়ে সিসিলির বন্দরে।
অভিবাসীদের নিয়ে বন্দরে ঢোকা কোস্টগার্ডের জাহাজটি পরিবহনমন্ত্রী দানিলো তোনিনেল্লির অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালভিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই জাহাজে থাকা উদ্ধারকৃতদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ জাহাজ থেকে বন্দরে নামতে পারবেন না।
শুক্রবার সালভিনি মন্তব্য করেছিলেন, তদন্তে যদি ওই অভিবাসীদের বিষয়ে খারাপ কিছু পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকে ইতালির বন্দরে আনার পরিণাম ভুগতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
প্রেসিডেন্ট মাত্তারেল্লা প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বৃহস্পতিবার। জাহাজে আটকে থাকা ৬৭ জন উদ্ধারকৃত বক্তিকে বন্দরে নামার অনুমতি দিতে তিনি অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে।
প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা অভিবাসীদের বন্দরে নামার পক্ষে ভূমিকা রাখায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন সালভিনি। এ ব্যাপারে ফাইভ স্টার মুভমেন্ট দলের নেতা উপপ্রধানমন্ত্রী লুইজি ডি মাইয়ো বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সন্মান দেখানো উচিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালভিনির দল নির্বাচনের আগে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠিন ভূমিকা গ্রহণ করবেন তারা। নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢুকতে চাওয়ায় আফ্রিকার অধিবাসীরা অনেক সময়ই সাগরে দুর্ঘটনায় পড়েন। তাদের বহনকারী নৌকাগুলো মাঝ সাগরে ডুবে গেলে তাদেরকে উদ্ধার করে ইতালীয় বন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয় প্রায়ই। এ কাজ যেমন করে অন্য দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তেমনি ইতালীয় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ। কিন্তু নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এভাবে অভিবাসীদের উদ্ধার করে ইতালিতে নিয়ে আসার বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
সাগর থেকে অভিবাসীদের উদ্ধার করার বিষয়ে তিনি বলেছেন, মানব পাচার বন্ধ করতে হবে। আর যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীন অভিবাসীদের দিয়ে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৭:৩০ ৩২৩ বার পঠিত