খুব দ্রুতই বিশ্বের চির বৈরী দুই প্রভাবশালী দেশ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্র্রথমবারের মতো পরিপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে প্রতিবেদেন প্রকাশ করেছে মার্কিন গোয়েন্দারা। আর তাতে উঠে এসেছে ১২ রুশ গোয়ান্দার নাম। আর এরপরই আলোচিত এই বৈঠক নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
তবে বৈঠক হবে জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন তিনি এই বিষয়টি নিয়ে পুতিনকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে চান।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই বৈঠক না হওয়ার পক্ষে বেশিরভাগ মার্কিনি। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই জোর দাবি করছেন যে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এখন একেবারেই উচিত হবে না রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করা।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন সিনিয়র রাজনীতিক এবং সাধারণ মার্কিনিদের দাবি উপেক্ষা করে সোমবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে বৈঠকে বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। এ উপলক্ষে হেলসিঙ্কিতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। দেশটিতে এখন ছুটির মৌসুম চললেও ডেকে পাঠানো হয়েছে নিরাপত্তাকর্মীদের।
এ বৈঠক বাতিলের দাবি জানিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা বলেন, সোমবারের শীর্ষ বৈঠক বাতিল করতে হবে, কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু নন। তাদের কথা হলো- রাশিয়ার গোয়েন্দারা রাষ্ট্রীয় মদদে মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করতে হিলারি ক্লিন্টনের ইমেইল ফাঁস করেছে, কম্পিউটার হ্যাক করেছে, ভোটারদের প্রোফাইল চুরি করেছে, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়েছে- তারা তদন্তে অভিযুক্ত হবার পর কী করে ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে নাক গলানো নিয়ে তিনি সরাসরি পুতিনকে প্রশ্ন করবেন। তার কথা, এটি নিয়ে যা হচ্ছে তা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট’।
রাশিয়া বলছে, শীর্ষ বৈঠকের আগে পরিবেশ বিষিয়ে তুলতেই ষড়যন্ত্র-তত্ব সামনে আনা হচ্ছে।
কিন্তু সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলারের তদন্ত রিপোর্ট বেরুনোর পর হৈচৈ শুরু হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে।
অভিযোগ হচ্ছে: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় জনমতের হাওয়া যেন হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে এবং ট্রাম্পের পক্ষে যায়- সে জন্য রুশ এজেন্টরা নানাভাবে কাজ করেছে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন ট্রাম্পের অন্তত ১২ জন সহযোগী। সিএনএনের বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে ট্রাম্পের ছেলে এবং জামাতাও সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
ট্রাম্পের নির্বাচনী দলের লোকেরা অবশ্য বলেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিদেশিদের সাথে বৈঠক স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দু’জন ট্রাম্প-সহযোগী স্বীকার করেছেন যে, তারা এসব বৈঠকের ব্যাপারে মিথ্যে বলেছিলেন।
এদের একজন মাইকেল ফ্লিন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তাকে ট্রাম্প বরখাস্ত করেছেন, বরখাস্ত করেছেন এ নিয়ে তদন্ত করা এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকেও। কিন্তু ফ্লিন কাদের সাথে বৈঠক করছেন তা কি ট্রাম্প জানতেন? এ প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।
এসব নিয়ে মুলারের তদন্ত ছাড়াও রাশিয়ার সাথে ট্রাম্প সহযোগীদের যোগাযোগ নিয়ে মোট চারটি তদন্ত চলছে এখন।
মুলারকেও কি ট্রাম্প বরখাস্ত করতে পারেন না?
এ নিয়ে বহু গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু মুলারকে বরখাস্ত করলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার চেষ্টা করতে পারেন ডেমোক্রাটরা।
মার্কিন মিডিয়ায় আরো ছড়িয়েছে নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে একজন রুশ আইনজীবীর সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সহ কয়েকজনের এক বৈঠক হয়- যাতে নাতালিয়া ভেসেলনিৎস্কায়া নাকি হিলারি ক্লিনটনকে ‘ফাঁসানো যাবে’ এমন কিছু কাগজপত্র দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এসব কাগজপত্রে তোমার বাবার খুব সুবিধে হবে’। ট্রাম্পের ছেলে নাকি জবাবে বলেছিলেন- তাহলে তো দারুণ হয়।
ট্রাম্প জুনিয়র পরে বলেছিলেন, এসব বৈঠক থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। ব্রিটিশ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার স্টিল এক তদন্তের পর একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন যা ফাঁস হয়ে যায়।
এতে বলা হয়, মস্কোর হাতে এমন কিছু জিনিসপত্র আছে যা ট্রাম্পকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে মস্কোয় এক হোটেলে একবার কিছু যৌনকর্মীর সাথে তাকে দেখা যাবার রেকর্ড থাকার দাবিও করা হয়। তবে ট্রাম্প এসব জোর দিয়ে অস্বীকার করেছেন।
এতে আরও আছে রাশিয়ার সাথে ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কথিত আর্থিক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য। পরে জানা যায়, স্টিলের রিপোর্টের জন্য মিসেস ক্লিনটন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির দিক থেকে টাকা দেয়া হয়েছিল।
বারাক ওবামা কি জানতেন?
ওয়াশিংটন পোস্ট এক রিপোর্টে জানায়, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে সিআইএ একটি খাম পাঠায় প্রেসিডেন্ট ওবামাকে- যাতে ছিল এক বিস্ফোরক তথ্য। তা হলো মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক প্রয়াস পরিচালনা করছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
ওবামা প্রশাসন চিন্তায় পড়ে যায় যে এটা প্রকাশ করা হবে কি না। কিন্তু তাহলে এটা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা মনে হতে পারে এমন ভেবে ওবামা প্রশাসন এ ব্যাপারটা নিয়ে চুপচাপ ছিল।
এ নিয়ে কি ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনি দল এ নিয়ে তদন্তকারীদের সাথে আলোচনা করছে। প্রেসিডেন্ট নিজে এ নিয়ে কোনো অঙ্গীকার করেননি। তিনি আভাস দিয়েছেন তার সাথে কথা বলার দরকার হবে না- কারণ রাশিয়ার সাথে কোন গোপন যোগাযোগ হয়নি।
মার্কিন মিডিয়ায় এমন জল্পনাও আছে যে মুলার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিচার কাজে বাধা দেবার অভিযোগ আনার কথা বিবেচনা করছেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
তাকে কি অভিশংসন করা হবে? এমন সম্ভাবনাও বিভিন্ন কারণে খুবই কম। দুটি জনমত জরিপে দেখা গেছে মার্কিন জনগণের একটা বড় অংশই মনে করে যে ট্রাম্পের সহযোগীরা কিছু একটা অন্যায় কাজ করেছেন। সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৯:৪০ ২৬২ বার পঠিত