শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় 

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় 
শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২



বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় 

রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ২৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও মাঠে থাকবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য। ঢাকার প্রবেশমুখে ইতোমধ্যেই ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এখনো তা অব্যাহত আছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এর বাইরে রাজধানীজুড়ে ডিএমপির সিসি ক্যামেরায় সবার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সমাবেশকে ঘিরে তল্লাশি গত কয়েকদিনের তুলনায় শুক্রবার ছিল সবচেয়ে বেশি। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট এবং রেলস্টেশনে র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কঠোর নিরাপত্তার কারণে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলো ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে, গত ১ ডিসেম্বর থেকে পুলিশের যে অভিযান শুরু হয়েছে তা এখনো চলছে। এ অভিযান চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তল্লাশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত আছে। এর অংশ হিসেবে যাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার গ্রুপ চেক করছে পুলিশ।

শুক্রবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি ডিএমপি দিয়েছে। ডিএমপির অনুমোদনের পরপরই সেই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা সেখানে যান। পোশাকি এবং সাদা পোশাকি পুলিশ সদস্যরা সেখানে গড়ে তুলেছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়। এ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই সেখানে ইতোমধ্যে জড়ো হয়েছেন বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। দেওয়ার পর সবশেষ খবর অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর লঞ্চঘাট, রেল, বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে পুলিশের তল্লাশি ছিল ব্যাপক। যানবাহনে ব্যাগ-শরীর তল্লাশির পাশাপাশি কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাবেন-কী কারণে ইত্যাদি বিষয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞেস করছে পুলিশ। তল্লাশির কারণও জানতে চান অনেক পথচারী। অনেকের মধ্যে চরম বিরক্ত প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।

সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এমনিতেই স্বল্প সংখ্যক যান চলাচল করে। ঢাকা থেকে বের হওয়া বিভিন্ন যানও তল্লাশির মুখে পড়ছে। যাত্রীদের বলছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ তল্লাশি চালাতেই পারে। কিন্তু তল্লাশির নামে পরিচয়পত্রও দেখাতে বলছে পুলিশ। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয়পত্র সব সময় থাকে না। কিন্তু কোনো সমাবেশকে কেন্দ্র করে এভাবে ঢালাও তল্লাশি চালিয়ে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি করা পুলিশের উচিত নয়।

এ ব্যাপারে ময়মসিংহ থেকে আসা কাদির মোল্লা জানান, তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন ব্যবসায়ের কাজে। শুক্রবারও এসেছিলেন জরুরি ব্যবসায়িক কাজে কিন্তু তল্লাশির মুখে পড়ে তার কাজের কিাজের দেরি হয়ে গেছে। এতে তিনি কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।

চট্টগ্রাম থেকে থেকে আসা ট্রেনযাত্রী মাহমুদ জানান, মায়ের চিকিৎসার জন্য গত কয়েকসপ্তাহ ধরে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছেন। কিন্তু আজ (শুক্রবার) তল্লাশির নামে যে পরিমাণ নাজেহাল হয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা মত নয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, রেলওয়ে স্টেশনে যেন কোনো অবস্থাতেই ক্ষয়-ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নানা কারণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকার প্রবেশমুখ ডেমরায় তল্লাশি করেছে পুলিশ। ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর পশ্চিম পাড়, স্টাফ কোয়ার্টার, চৌরাস্তা, কোনাপাড়া ও ডেমরা-রামপুরা সড়কসহ অভ্যন্তরীণ এলাকাতেও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। ডেমরা থানার অপারেশন অফিসার (ইন্সপেক্টর) সুব্রত কুমার পোদ্দার বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী কড়া সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মত। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানায় কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার। মুন্সীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮০টি চেকপোস্ট বসিয়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।

জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা খবর পেয়েছি, জামায়াতে ইসলামী নাশকতার পরিকল্পনা করছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা পল্টন সমাজ কল্যাণ মসজিদের গলিতে একত্র হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। এই স্লোগানটি বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ দলের স্লোগান। তার মানে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য আছে। এখন যে-ই নাশকতার পরিকল্পনা করুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো দুষ্কৃতকারী, নাশকতাকারী অথবা জামায়াত-শিবিরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১:১৫:৫৮   ২৩৫ বার পঠিত