নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন কাজটি সম্পন্ন হলে এটি অনন্য উচ্চতায় চলে যাবে। তিনি বলেন, মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার কাছাকাছি চলে যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য্যের প্রসার ঘটবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে মোংলা বন্দর এগিয়ে যাবে।
আজ সোমবার ঢাকায় হোটেল রেডিসনে মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংক্রান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তাঁর উপস্থিতিতে মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা এবং ইজিস ইন্ডিয়া কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড গ্রুপের সিইও লরেন্ট জার্মেইন।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে স্থিমিত মোংলা বন্দর সচল করার পদক্ষেপ নেন। ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেন। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় এ বন্দরটিকে কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, বন্দরটি লোকসান কাটিয়ে লাভের ধারায় ফিরে এসেছে। পশুর নদীর আউটারবারে ড্রেজিং করার ফলে হারবাড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারে। ইনারবারে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে; যাতে বন্দর জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মোংলা বন্দরে বর্তমানে জাহাজ, কার্গো, কন্টেইনার এবং গাড়ি হ্যান্ডলিং গড়ে ১৭, ১৯, ৮ এবং ১৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোংলা বন্দরের জন্য কৌশলগত মাস্টার প্ল্যান যথাক্রমে ২০২৫, ২০৪০ এবং ২০৭০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্য প্রস্তাব করেছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০৪০ সালের শেষ নাগাদ মোংলা বন্দরে কার্গো, কন্টেইনার এবং গাড়ি হ্যান্ডলিং যথাক্রমে ২, ১৫ ও ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলায় মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য “আপগ্রেডেশন মোংলা বন্দর প্রকল্প” গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬,০১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ১,৫৫৫ কোটি এবং প্রকল্প সহায়তা ৪,৪৫৯ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল পহেলা জানুয়ারি ২০২০ থেকে ৩০ জুলাই ২০২৪। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ইজিস ইন্ডিয়া কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড। আপগ্রেডেশন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড নির্মাণ, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ, সার্ভিস ভেসেল জেটি নির্মাণ, ৮টি জলযান সংগ্রহ, বন্দর আবাসিক কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি সুবিধা নির্মাণ, বন্দর ভবন এবং মেকানিকেল ওয়ার্কশপ সম্প্রসারণ, স্লিপওয়ে এবং যন্ত্রপাতিসহ মেরিন ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স নির্মাণ, দিগরাজে রেলক্রসিং ওভারপাস নির্মাণ, মোংলা বন্দরের বিদ্যমান সড়ক ৬ লেনে সম্প্রসারণ, বহুতল কার ইয়ার্ড নির্মাণ ইত্যাদি। প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর বছরে ১,৮০০টি জাহাজ, এক কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো, চার লাখ টিইইউস কন্টেইনার, ১০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিং করতে পারবে।
মোংলা বন্দরের বার্ষিক আয় ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমস ও অন্যান্য সংস্থার আয় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪২:০৭ ২২৯ বার পঠিত