জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের ক্রয় সক্ষমতা ঠিক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই বাংলাদেশকে টেনে ধরার ক্ষমতা কারোই নেই। আমি প্রতিদিন সকাল বেলা টেলিভিশনে দেখি বাজার নিয়ে আলোচনা হয়। বাজারে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়ছে। এটা কিন্তু সমগ্র পৃথিবীর সাধারণ বিষয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কিন্তু বাজারে জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না এই রকম ঘটনা নেই। চাল-ডাল, তেল-চিনি, লবণ, মাছ-মাংস সবকিছুই কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। দাম বাড়লেও মানুষের ক্রয় সক্ষমতা রয়েছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক চালের বাজার আজকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। গত ১০০ বছরেও পৃথিবীতে চালের বাজার এত ঊর্ধ্বগামী হয়নি। অনেক দেশ আছে যে দেশে কোনো পণ্য উৎপাদন হয় না। সেইসব দেশ কিন্তু বড় খাদ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। আর যাদের পণ্য আমদানি করতে হয়, সেইসব কিন্তু অনেক চিন্তার মধ্যে আছে। এই রকম পরিস্থিতি যদি চলমান থাকে অনেক দেশ আছে যারা ধনী, অর্থ আছে কিন্তু পণ্য পাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন যেসময়ে অবস্থান করছি, এটা খুব ভালো সময় নয়। সমগ্র পৃথিবীতেই একটা বড় ধরনের সংকট চলমান আছে। এবং এই সংকটটা গত পাঁচ বছর যাবত আমরা মোকাবিলা করছি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ একটা খুব ভালো অবস্থানে ছিল। ঠিক এরপরই বিশ্ব বৈশ্বিক সংকট, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশকেও কিন্তু সেটা মোকাবিলা করতে হয়েছে। শুধু তাই নয় রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রভাবও বাংলাদেশে পড়েছিল।
রংপুরে পাইপ লাইনে গ্যাসের সংযোগ স্থাপন প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুরে যে গ্যাস সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে, তা শিল্পকলকারখানার জন্য। এটা ভাত-তরকারি রান্নার জন্য দেওয়া হয়নি। আমাদের রান্না-বান্নার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের গ্যাসের বিকল্প বিদ্যুৎ আছে। বিদ্যুতের বিকল্প পাটখড়ি বা জ্বালানি আছে। আমাদের অনেক বিকল্প আছে। গত কয়েকদিন যাবত ঢাকায় ব্যাপক গ্যাসের সংকট। এ নিয়ে আমি একটি টেলিভিশনে বলেছি- গ্যাসের সংকট নেই, জ্বালানির সংকট নেই। পাইপ লাইনে সরবরাহ সংকট থাকতে পারে। কিন্তু সিলিন্ডার বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না এই রকম সংবাদ তো কোথাও দেখিনি।
সারা দেশের মতো রংপুরেও বিগত ১৫ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা গর্ব করে বলতে পারি বাংলাদেশে যে পানি প্রবাহ হয়, তার ৭২ ভাগই উত্তরবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নদ-নদীগুলোও উত্তরবঙ্গের। ব্রক্ষ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা, পদ্মা সবই উত্তরবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত। অথচ আমরা কিন্তু খরার মধ্যে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্রক্ষ্মপুত্র নদ খননের ব্যবস্থা করেছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ধরলা নদী, ঘাঘট নদী খনন হচ্ছে।
এর আগে ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মো. আকবর আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল কাশেম, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল, যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীন ও রংপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবু হেনা মো. রেজওয়ানুল করিম।
মেলা পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানিয়েছে, মেলা ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে সবকিছু। মাসব্যাপী মেলায় থাকছে ৭টি প্যাভিলিয়নসহ ১১০টি স্টল। স্টলগুলোতে থাকছে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য, প্রসাধনী, জুতা, খেলনা, ক্রোকারিজ, হস্তশিল্প, তাঁতের শাড়ি, থ্রিপিস, গার্মেন্টস পণ্যসহ হরেক রকমের সুস্বাদু খাবারের দোকান।
মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উদ্যোক্তারা স্টলগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে তাদের পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করবে। শিল্প ও বাণিজ্য মেলা চলবে প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং মেলার প্রবেশ টিকিট মূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা।
সূত্র আরও জানান, তাজমহলের আদলে সাজানো হয়েছে রংপুর শিল্প ও বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক। মেলা জুড়ে থাকছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। যা দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দেবে বলে আমরা আশাবাদী। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকছে ড্রাগন ট্রেন, বেবি ট্রেন, হাতি-ঘোড়া, ওয়াটার বোর্ড, ডিজিটাল নৌকা, ডিজিটাল নাগরদোলা, হ্যানিচিং, ভূতের বাড়ি, সিপ্লার, জ্যাম্পপিং রাইডস ও খাবারের দোকানসহ জমজমাট আয়োজন দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে।
এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক ড্যান্সিং পানির ফোয়ারার পাশাপাশি থাকছে সেলফি টাওয়ার ও সেলফি জোন। এছাড়াও দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে মেলা প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী নামাজ ঘর ও শৌচাগার।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৯:০০ ৭৬ বার পঠিত