
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ইফরাত হাসান সবুজ(২৬) নামে এক শিক্ষককে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনা মহাদান ইউনিয়নের সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিউজ টু নারায়ণগঞ্জ কে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইফরাত হাসান সবুজ জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা গ্রামের মনতাজুর রহমানের ছেলে। সে সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ল্যাব ও কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ৩ বছর হলো যোগদান করেছেন। সে প্রতিদিন নিজ মোটরসাইকেল যোগে নিজ গ্রাম থেকে বিদ্যালয়ে আসে এবং বিদ্যালয়ে কাজ শেষ করে বিকালে বাড়ী ফিরে যায়। সে অবিবাহিত একজন যুবক। তার বিদ্যালয়ের কর্ম দায়িত্ব ছাড়া অন্য কোন পেশা বা নেশা নেই। তার বিরুদ্ধে যদি কেউ অন্য কিছু বলে তাহলে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন।
বিদ্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে সোমবার বেলা ৩টার দিকে সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাব ও কম্পিউটার অপারেটর ইফরাত হাসান সবুজ বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ০১৬১৩-৫৪৮১৫৪ নাম্বারে একটি ফোন কল পেয়ে সে বিদ্যালয়ের বাহিরে যায়। এ সময় বিলবালিয়া গ্রামের আবুল কালাম এর ছেলে নয়ন মিয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন চাঁদাবাজ,সন্ত্রাসী ও বখাটে যুবক জোরপূর্বক তাকে মোটরসাইকেলে তুলে ধোপাদহ বিলপাড় নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণ নাশের হুমকী দেয় এবং পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে টাকা দিতে সে অস্বীকৃতি জানালে, তাকে এলোপাথাড়িভাবে মারধর করে। এরপর তাকে দিয়ে তার মার কাছে ফোন করিয়ে নগদ টাকা দাবি করে। এ সময় তার মা টাকা নেই বলে জানালে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করে এবং জোরপূর্বক ১০০ টাকা দামের ৩টি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।
এসময় এসব কথা যেন, সে কাউকে না বলে এবং সে একজন মাদকসেবী ও মাদক কারবারি বলে তার স্বীকারোক্তি তারা জোরপূর্বক মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে এবং বলে, এসব ঘটনা জানাজানি করলে সকল ভিডিও ভাইরাল করে দিবে এবং তাকে চাকুরীচ্যুত করবে। এরপর সন্ধ্যা হয়ে এলে, তারা তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দিগপাইত বাজারের পার্শ্বে নামিয়ে দিয়ে আসে। পরে সে আহত অবস্থায় সিএনজি করে বাড়ি চলে যায়। এরপর তার বোনকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয় এবং ওইদিন রাতেই ঘটনার বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের জামালপুর বাসায় গিয়ে তাকে অবগত করেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ইফরাত হাসান সবুজ অনেক ভালো মানুষ। সে মাদারগঞ্জ থেকে প্রতিদিন সরিষাবাড়ীতে এসে বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। একজন মানুষ বিদ্যালয়ে চাকরি করে কখনোই সে মাদক ব্যবসা করতে পারেন না। এটি অবিশ্বাস্য।
ভুক্তভোগী ইফরাত হাসান সবুজ বলেন, অভিযুক্তরা মহাদান ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বখাটে প্রকৃতির। তারা মাঝে মধ্যেই স্কুলের আশপাশে আড্ডা দেয়। গত ৫ আগস্টের পর ওরা প্রায়ই আমাকে টার্গেট করে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। আমি পাত্তা না দেওয়ায়, তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতো। ওইদিন তারা আমাকে ফোন করে বিদ্যালয়ের গেটের বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে ধোপাদহ বিলপাড় নির্জন এলাকায় নিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে মারধর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখেন এবং আমি মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী বলে জোরপূর্বক আমাকে দিয়ে বলিয়ে তারা ভিডিও রেকর্ড করে। বর্তমানে তারা আমাকে ওই টাকার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে আমার নিরাপত্তাসহ এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানার জন্য অভিযুক্ত নয়ন মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাশেদ হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫২:১৪ ২৬ বার পঠিত