জামালপুর প্রতিনিধি : আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ভিজিএফ চাল বিতরণে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ৮নং মহাদান ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ কার্ড বিতরণের ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে বর্তমানে চাল বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৪ জুন) রাতে মহাদান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব এবং সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটনের অনুসারীদের মধ্যে ভিজিএফ স্লিপ বিতরণের ভাগাভাগি নিয়ে তুমুল বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয় এবং পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশকে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।
এই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভিজিএফ চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। মহাদান ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে মহাদান ইউনিয়নের জন্য মোট ৪৪৯৮টি ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮০০ কার্ড ১, ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে বিতরণ করা হয় এবং সুবিধাভোগীদের মাঝে চালও বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ওয়ার্ডগুলোতে স্লিপ বিতরণের ক্ষেত্রে নেতাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
ইউপি পরিষদের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, এবারের ভিজিএফ বরাদ্দের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের মাত্র ৬০টি করে কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি কার্ডগুলো নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এই ভাগাভাগিতে কমবেশি হওয়ার কারণেই মূলত এই সংঘর্ষের সূত্রপাত।
তারা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই সমস্যার সমাধান না হলে বাকি চাল বিতরণ আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সচিব আব্দুর রহিম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, যদি সমস্যার সমাধান হয়। তাহলে আগামীকাল শনিবার (৬ জুন) থেকে আবার চাল বিতরণ শুরু হতে পারে। তবে এই ঘটনার কারণে অসহায় ও দরিদ্র সুবিধাভোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং তাদের ঈদ আনন্দ অনেকটা ম্লান হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মহাদান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাবের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন জানান, প্রথম দিন ভিজিএফ চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় দিনে অবশিষ্ট চাল বিতরণের জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক কার্ড বন্টন নিয়ে স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং চাল বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিজা রিছিল বলেন, মহাদান ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ড বিতরণে সামান্য সমস্যা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, আগামীকাল (শুক্রবার) অবশিষ্ট কার্ডের চাল বিতরণ করা হবে।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাশেদুল হাসান জানান, বুধবার রাতে মহাদান ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ড বিতরণের বন্টন নিয়ে উভয়পক্ষই উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভিজিএফ কার্ড বন্টন নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব এবং স্বজনপ্রীতির কারণে এই বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগে চাল বিতরণে এই অচলাবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২১:৫০ ২৭৯ বার পঠিত
