
জামালপুর প্রতিনিধি : রাজনীতির মাঠের পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবেও সফলতার মুখ দেখেছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বিএনপি নেতা রাশেদুল ইসলাম রনজু।
বৃহস্পতিবার(৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার প্রতিষ্ঠিত ‘মন্ডল হ্যাচারি’ কেবল তার নিজের ভাগ্যই বদলায়নি, পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়রা বাজার এলাকার পুরো গ্রামের অর্থনৈতিক চিত্রই পাল্টে দিয়েছে। কঠোর পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে রনজু এই অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছেন।
জানা যায়, একসময় ছোট্ট পরিসরে শুরু করা রনজুর শখের খামার আজ পরিচিতি পেয়েছে ‘মন্ডল হ্যাচারি’ নামে। এই হ্যাচারিতে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মুরগি, হাঁস কোয়েল ও উট পাখির ডিম সহ অন্যান্য পোল্ট্রি প্রাণীর ডিম থেকে ফুটফুটে ও স্বাস্থ্যসম্মত বাচ্চা ফোটানো হচ্ছে। স্বল্প খরচ এবং কম ঝুঁকির কারণে স্থানীয় অনেকেই এই হ্যাচারির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে, একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারে ডিম ও বাচ্চার চাহিদাও মেটানো সম্ভব হচ্ছে।
রনজুর এই উদ্যোগ সরকারি দপ্তরেরও নজর কেড়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতা হয়েও নিজ উদ্যোগে প্রযুক্তি নির্ভর এই খামার স্থাপন কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি একটি গ্রামের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে। রাশেদুল ইসলাম রনজু দেখিয়েছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে যেকোনো উদ্যোগই সফলতার মুখ দেখতে পারে। তার এই হ্যাচারি গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং স্থানীয়দের স্বাবলম্বী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি, যারা হ্যাচারিতে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা নিতে এসেছেন, তারা জানান, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে একটি মুরগি বা হাঁস সীমিত সংখ্যক ডিম ফোটাতে পারে। কিন্তু হ্যাচারির মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছে ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক ডিম ফোটানো সম্ভব হয়। এর পাশাপাশি, আধুনিক হ্যাচারিগুলোতে ডিম ফোটানোর সময় রোগ নিয়ন্ত্রণের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকে। এর ফলস্বরূপ, সুস্থ ও নিরোগ বাচ্চা পাওয়া নিশ্চিত হয়, যা পশুপালকদের জন্য একটি বড় সুবিধা তারা মনে করেন।
পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মুকুল মিয়া বলেন, ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা নেওয়া একটি সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া, যা ঐতিহ্যগতভাবে মুরগি বা হাঁসের দীর্ঘ সময় ধরে ডিমে তা দেওয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে, আধুনিক হ্যাচারিগুলো এই প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করে দিয়েছে, যার ফলে মানুষের মূল্যবান সময় এবং শ্রম দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। হ্যাচারি প্রযুক্তির এই অগ্রগতি শুধু সময় এবং শ্রমই বাঁচাচ্ছে না, বরং বাণিজ্যিকভাবে পশুপালনেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
হ্যাচারির মালিক রাশেদুল ইসলাম রনজু বলেন, “আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিম ফোটাই। আমাদের হ্যাচারিতে উৎপাদিত প্রতিটি বাচ্চা সুস্থ ও সবল হয়, যা খামারিদের জন্য লাভজনক।” যারা বেকার যুব ও যুব মহিলা রয়েছেন তারা অল্প পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসাটি করতে পারেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সরিষাবাড়ী উপজেলা উপকৃত হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই বাচ্চাগুলো যদি অন্যত্র বিক্রি করা যায়, তবে উদ্যোক্তা সফল হবেন এবং তার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস একদিন বৃহৎ আকার ধারণ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৯:৩৬ ৬৬ বার পঠিত