ম্যাচ শেষ হতে কয়েক সেকেন্ডই বাকি ছিল। যোগ করা সময়ের সেই কয়েক সেকেন্ড শেষ হলেই ড্রয়ে মাঠ ছাড়তেন বাংলাদেশ ও নেপালের মেয়েরা। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ যেন তা হতে দিতে রাজি ছিল না।
তা না হলে শেষ মুহূর্তে গোল করে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসাতেন না তৃষ্ণা রানী।
যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে উমেলা মারমার পাস থেকে বলকে শুধু জাল দেখিয়ে দিলেন বদলি নামা তৃষ্ণা। এমন রোমাঞ্চকর গোলের পর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন বাংলাদেশের মেয়েরা।
বিপরীতে হতাশার রাজ্যে যেন পড়েন নেপালের মেয়েরা। এতটাই যে গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের চোখ বেয়ে পানি নামতে থাকে।
ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ মুহূর্তে এমন হার যেন মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি।
নেপালের বিপক্ষে ৩-২ গোলের রোমাঞ্চকর জয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল কোচ পিটার বাটলারের শিষ্যরা।
আজ ম্যাচ শুরুর তৃতীয় মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষের বক্সে জটলায় অবশ্য শেষ পর্যন্ত গোল পায়নি বাংলাদেশ। তবে ১৩ মিনিটে ঠিকই গোল পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে লিড এনে দেওয়া গোলটি করেন সিনহা জাহান শিখা। গোলটা অবশ্য মুনকি আক্তারের হতে পারত।
প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মুনকি।
গোললাইন পার হওয়ার আগে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করেন। তবে বলটা শিখার পায়ে গেলে তা থেকে গোল করতে ভুল করেননি এই ফরোয়ার্ড।
এর আগে অবশ্য পিছিয়ে পড়ারও শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী মন্ডল বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে মারলে তা জালে জড়ানোর সুযোগ ছিল। তবে ভাগ্য ভালো বাংলাদেশের অল্পের জন্য বলটি বাইরে দিয়ে যায়। তারও আগে গোলরক্ষক স্বর্ণা সামনে এগিয়ে আসায় ফাঁকা গোলবারে বল জড়াতে পারেনি নেপালের এক খেলোয়াড়। বারের ওপর দিয়ে মারেন পূর্ণিমা রাই। সে যাত্রায় বাংলাদেশ রক্ষা পেলেও নেপাল বিরতিতে যাওয়ার আগে আরেকবার পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে।
৩৬ মিনিটে দলের দ্বিতীয় গোল করেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। বাঁ প্রান্ত থেকে ডি বক্সে দারুণ এক ক্রস করেন শান্তি মার্ডি। বল মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই শট নেন সিনহা জাহান শিখা। তবে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক সুজাতা তামাং শুরুতে ঠেকিয়ে দিলেও বল তালুবন্দি করতে না পারায় ফাঁকায় দারুণ সাগরিকা জালে জড়িয়ে দেন। এরপর আর কোনো গোল না হলে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতি শেষে প্রথমার্ধের আধিপত্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই সুযোগটা নিয়েই ম্যাচে ফেরে নেপাল। তার আগে ম্যাচের ৫৫ মিনিটে এক হাতাহাতির ঘটনায় ১০ জনের দলে পরিণত হয় দুই দল। একটি বল দখলের ঘটনায় দুজনই বল হারিয়ে ফেলেছিলেন। সে সময় নেপালের সিমরান রায় বাংলাদেশের সাগরিকাকে অফ দ্য বল আটকে রাখতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তাতে সাগরিকাও মেজাজ হারিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে সাগরিকা ও সিমরান দুজনকেই লালকার্ড দেখান ভুটানের রেফারি। ৭৭ মিনিটে ব্যবধান ঘোঁচায় নেপাল। বক্সের ভেতর মিনা দেউবাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন জয়নব বিবি রিতা। যা চোখ এড়ায়নি ভুটানের রেফারির। পেনাল্টি থেকে গোল করেন আনিশা রায়।
৮৬ মিনিটে নেপাল সমতায় ফেরে বাংলাদেশের ডিফেন্সের চরম ভুলে। হাই লাইন ডিফেন্সে নেপালকে অফসাইড ফাঁদে ফেলতে যাওয়ার খেসারত দিতে হয় স্বাগতিকদের। সুযোগে বল নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে যান পুর্নিমা রায়। আড়াআড়ি পাসে বল দেন মিনা দেউবাকে। ঠান্ডা মাথায় বল পোস্টে জমা করে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন এই ফরোয়ার্ড। তবে সেই আনন্দ যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে মাটি করে দেন বদলি নামা তৃষ্ণা। বাংলাদেশি ফরোয়ার্ডের গোলের পর রেফারিও শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৯:১৯ ১৩ বার পঠিত