
রংপুর প্রতিনিধি: বর্ষাকালে তীব্র অনাবৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটে পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানির ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন হাজারো পাটচাষি। বাধ্য হয়ে চড়া দামে পুকুর ভাড়া নিচ্ছেন তারা, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণ। পাশাপাশি, ঘোলা ও স্থির পানিতে পাট পচানোর কারণে আঁশের মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে—ফলে ‘সোনালী আঁশ’ ঘিরে কৃষকের স্বপ্ন ক্রমেই মলিন হয়ে উঠছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাটের ভালো ফলন হলেও প্রাকৃতিক বৈরীতায় তার সুফল পাচ্ছেন না চাষিরা। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবার জুলাই মাসের প্রথম ২০ দিনে বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। এ কারণে খাল-বিল-নদী শুকিয়ে গেছে, যা পাট জাগ দেওয়ার জন্য বড় বাধা। চাষিরা বলছেন, পাট জাগ দেওয়ার জন্য স্রোতযুক্ত ও স্বচ্ছ পানির বিকল্প নেই। পুকুরের পানি ব্যবহার করলে আঁশের রং কালচে হয়ে যায়, বাজারে ভালো দাম মেলে না।
এখন পাট জাগ দিতে অতিরিক্ত ২-৩ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে, যা অনেকের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুকুর মালিকদের দাবি, তারা নিজের খরচে পুকুরে পানি ধরে মাছ চাষ করেন। ওই পানিতে পাট পচালে মাছের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকায় চড়া ভাড়া না পেলে পুকুর ছাড়তে রাজি নন।
কালীগঞ্জ উপজেলাও একই সংকটে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় জানান, এখানেও ৩৮০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ ভাগ পাট কাটা শেষ হয়েছে। বৃষ্টি না হলে জাগ দেওয়ার সঙ্কট আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছে। এতে অল্প পানিতে আঁশের মান বজায় রেখে পাট পচানো সম্ভব হয়। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বর্ষা আর পূর্বের মতো নয়—এটা উত্তরাঞ্চলের কৃষির জন্য এক গুরুতর অশনিসংকেত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২১:০৬ ৩৭ বার পঠিত