
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রতিটি শিল্পই রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে পুরোনো প্রযুক্তির পাওয়ার ক্যাবল বা টেলিকম ক্যাবলের চাহিদা কমবে এবং নতুন প্রযুক্তির ক্যাবলের চাহিদা বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড বিভিন্ন প্রজন্মের ক্যাবল উৎপাদন করে। এখানে ক্রমাগত পুরোনো প্রযুক্তির বদলে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সাথে কার্যকর প্ল্যানিং, মার্কেটিং পলিসি গ্রহণ এবং ফাস্ট ডিস্ট্রিবিউটশন ও প্রোয়েক্টিভ মার্কেটিং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনার শিরোমনি এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড (বাকেশি) পরিদর্শন শেষে প্রতিষ্ঠানটির সম্মেলনকক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এসব কথা বলেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘কমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র বিবেচনায় নিলে দেশে ৫ লাখ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক থাকার প্রয়োজন। দেশে মাত্র দেড় লাখ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। আবার বিদ্যমান নেটওয়ার্কের ৭৫ শতাংশই ওভারহেড নেটওয়ার্ক, যা টেলিযোগাযোগ গ্রেডের নয় এবং বিভিন্ন দুর্যোগের সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে মানসম্মত ও কম ঝুঁকিপূর্ণ রাখতে সংযোগগুলোকে মাটির নিচে দিয়ে নেওয়া দরকার। আবার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাখাতের পুরাতন ক্যাবল নেটওয়ার্ককে কমন ডাক্ট-এর অধীনে আনাসহ চার সরকারি ফাইবার কোম্পানির ফাইবার সমূহের রুটগুলো আন্তঃসংযুক্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্কের (ফাইবার ব্যাংক) অধীনে আনা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি বাসাবাড়িতে একক ফাইবারের মাধ্যমে টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে বর্তমানের ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল অপব্যবস্থার স্থায়ী অবসান দরকার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল শিল্পের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘খুলনায় অবস্থিত পাওয়ার ও অপটিক ফাইবার ক্যাবল ফ্যাক্টরিটি একটি পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত সবুজ কারখানা। ফলে এর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেশন অতি দ্রুত গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে এখানকার উৎপাদিত পণ্যগুলোর ব্রান্ড ভ্যালু বাড়বে। একই সঙ্গে এখানে উৎপাদিত পণ্যের নতুন ও সম্ভাবনাময় বাজার ও ক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ও সার্বিক সহযোগিতা করবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রয়োজন ও দাবিগুলোর বিষয়ে সরকার ওয়াকিবহাল আছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, খুলনার শিরোমনি এলাকায় বাকেশি ১৯৭২ সাল থেকে টেলিকম কপার ক্যাবল উৎপাদন করে আসছে। এছাড়াও ২০১০ সাল থেকে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ২০১৬ সাল থেকে এইচডিপিই টেলিকম ডাক্ট এবং ২০১৯ সাল থেকে ওভারহেড কন্ডাক্টার পাওয়ার ক্যাবলসহ বর্তমানে সুপার এনামেল উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক ৫০ হাজার কন্ডাক্টর কিলোমিটার টেলিকম ক্যাবল, ২৫ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ছয় হাজার ৫০০ কিলোমিটার এইচডিপিই টেলিকম ডাক্ট এবং ৬০০ মেট্রিকটন ওভারহেড কন্ডাক্টার ও পাওয়ার ক্যাবল উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ২৮ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে।
মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আমিরুল ইসলাম, বাকেশির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, বাকেশির কর্মকর্তাসহ সিবিএ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী টেলিটক বাংলাদেশ-এর খুলনা বিভাগীয় অফিস, পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয় দক্ষিণাঞ্চল ও বিটিসিএল এর বিভাগীয় অফিস পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তিনি বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড এবং পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয় দক্ষিণাঞ্চল প্রাঙ্গণে আমের চারা রোপণ করেন ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৫:৪৩ ৪ বার পঠিত