রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫

জামালপুরে চর বরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতায় চলছে বহিরাগতদের পাঠদান

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » জামালপুরে চর বরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতায় চলছে বহিরাগতদের পাঠদান
রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫



জামালপুরে চর বরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতায় চলছে বহিরাগতদের পাঠদান

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ১০নং চর বরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন এক অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার জ্বলন্ত উদাহরণ। নিয়মিত শিক্ষক অনুপস্থিতি, অপরিষ্কার পরিবেশ আর পড়াশোনার মান তলানিতে নেমে আসায় বিদ্যালয়টি তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ তদারকির অভাবে একসময়কার অন্যতম প্রধান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের মুখে।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শনে দেখা যায় এক ভয়াবহ চিত্র। খেলার মাঠ ময়লা-আবর্জনা, নোংরা পানি আর আগাছায় ভরা। ভেতরের পরিবেশ আরও নাজুক ; ছাগলের মলমূত্রের দুর্গন্ধে শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ধুলায় ভরা বেঞ্চগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। মোট ১৩৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সেদিন উপস্থিত ছিল মাত্র ৫ জন। প্রাক-প্রাথমিক, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির এই পাঁচজন শিক্ষার্থীও অপেক্ষায় ছিল শিক্ষকদের জন্য, কিন্তু প্রধান শিক্ষক রমজান আলীসহ কোনো শিক্ষকই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ে। এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ, নাম আবুল কালাম, খালি গায়ে শিশুদের পড়াচ্ছেন। তিনি জানান, শিক্ষকরা না থাকায় শিশুরা এসে বসে থাকে, তাই তিনি মাঝেমধ্যে এভাবে তাদের সময় দেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের নিয়মিত অনুপস্থিতি এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। এমনকি তারা প্রক্সি শিক্ষক দিয়েও ক্লাস করান, যা শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এর ফলে একদিকে যেমন পড়াশোনায় আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, অন্যদিকে অনেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।

অভিভাবকদের দাবি, তাদের সন্তানেরা ঠিকমতো ক্লাস করার সুযোগ পায় না। অধিকাংশ সময় ক্লাসে কোনো শিক্ষক থাকেন না, যার ফলে পড়াশোনার প্রতি তাদের অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। একসময় এই বিদ্যালয়টি যমুনা চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন এটি ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সচেতন মহল এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের মতে, এখনই যদি বিদ্যালয়টি বাঁচাতে উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি অচিরেই সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহানারা খাতুন বলেন, “ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) জারি করা হয়েছে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৬:২০   ২৩৫ বার পঠিত