
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জবানবন্দিতে বলেছেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে নতুন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। গত বছরের ৪ আগস্ট তাকে নতুন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
এদিন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির হন নাহিদ ইসলাম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গত বছরের ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। ওইদিনই তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। ওইদিন ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সরকার কারফিউ ঘোষণা করে। দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা জানতে পারেন, ৬ আগস্ট সরকার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকার মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবে, তাদের হত্যা ও গুম করা হতে পারে। তাই তারা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন।
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে মাহফুজ আলম (বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা) অন্যান্য ছাত্রসংগঠনসহ নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তারা নতুন সরকার গঠনের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন। ৪ আগস্ট তাকে নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেন।
৫ আগস্ট সারা দেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, তারা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করেন। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী একপর্যায়ে রাস্তা ছেড়ে দিলে তারা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তারা শুনতে পান, ঢাকার প্রবেশমুখ যেমন যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে তারা গণভবনে উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে সংবাদ পান, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন। আরও শুনতে পান, ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে। ওইদিন সন্ধ্যায় তারা সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন এবং সব বন্দির মুক্তির দাবি জানান। তারা কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন মেনে নেবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের সংবাদ পান বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এসব ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের এবং যারা গণহত্যা ও নির্যাতন অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের দায়ী করছেন তিনি।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজকে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৭:৫৬ ৯ বার পঠিত