দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখী করতে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের যাচাই-বাছাই চলছে, সহসাই তদন্ত শুরু হবে।
রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্য একটি মামলায় ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ দাখিলের পর প্রেস ব্রিফ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, দুই-তিনদিন আগে বরিশালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেছেন— আপাতত বা খুব শিগগিরই এই নিষেধাজ্ঞা উঠছে না।
পরের অংশে বলেছেন— তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে জানতে চাই।
জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা কোথায় কি বলেছেন, ‘সেটার জবাব আমার দেওয়া উচিত হবে না। আমাদের কাছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এনডিএম (ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন) নামের একটি রাজনৈতিক দল আগেই একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
আমরা সেটার ভিত্তিতে তদন্ত ইনিশিয়েট (শুরু করা) করছি। সুতরাং বলা যেতে পারে এই মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপরাধী সংগঠন হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রাথমিক তদন্তের কাজটি আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। সেটা যদি পুরোদমে শুরু হয়, তখন আমরা বলতে পারব আওয়ামী লীগের বিচারের মুখোমুখি ব্যপারটা কতদূর গড়াচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ এসেছে।
আমারা এটা গুরুত্ব দিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। খুব সহসাই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হবে।’
দল-সংগঠনের বিচারে নিষিদ্ধের বিধান
গত বছর ৫ আগস্ট জুলাই অভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কয়েক দফা পরিবর্তন আনে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন এনে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে রাজনৈতিক দল-সংগঠনের বিচারের বিধান রেখে ফের সংশোধনী আনা হয় আইনটিতে।
‘অধিকতর সংশোধন’ এনে চলতি বছর ১১ মে দ্বিতীয়বার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এই সংশোধনীতে বিচারে কোনো দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণ হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেই দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে পারবে। শুধু তাই না, সংশ্লিষ্ট দল-সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মত শাস্তি আরোপ করার ক্ষমতা দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালকে।
দ্বিতীয় অধ্যাদেশর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২ ও ২০ ধারায় সংশোধন আনা হয়। দুটি ধারাতেই একটি করে উপধারা বা উপবিধান যুক্ত করা হয়। দুটি উপধারাই দল, সংগঠনের সংজ্ঞা ও শাস্তি সংক্রান্ত।
ধারা ২-এ সংযুক্ত উপধারায় সংগঠনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সংগঠন’ বলতে বোঝায় যেকোনো রাজনৈতিক দল অথবা এই ধরনের দলের অধীনস্থ অথবা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা এর সঙ্গে যুক্ত কোনো সত্ত্বা অথবা ট্রাইব্যুনালের মতে, এই ধরনের কোনো দল বা সত্ত্বার কর্মকাণ্ডের প্রচার, সমর্থন, অনুমোদন, সহায়তা বা অংশগ্রহণকারী কোনো গোষ্ঠী।’
আর ধারা ২০(ক)-এর পর ২০(খ) উপধারা যুক্ত করে এতে সংগঠনের শাস্তি কি হবে, সেই বিধান রাখা হয়েছে। শুধু তাই না, এই উপধারাটিকে বিদ্যমান অন্য আইন থেকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। ‘সংগঠনের শাস্তি, ইত্যাদি’ শিরোনামের এই উপধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনে অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো সংগঠন এই আইনের ধারা ৩ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, প্ররোচনা দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহায়তা করেছে বা অন্যথায় সহায়তা করেছে, তাহলে ট্রাইব্যুনালের সেই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা থাকবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৬:২৫ ১২ বার পঠিত