বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

জামালপুরে দায়িত্বহীন শিক্ষণ, শিক্ষার্থীশূন্য স্কুল, বাড়ছে মাদ্রাসা-কোচিংয়ে ভিড়

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » জামালপুরে দায়িত্বহীন শিক্ষণ, শিক্ষার্থীশূন্য স্কুল, বাড়ছে মাদ্রাসা-কোচিংয়ে ভিড়
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫



জামালপুরে দায়িত্বহীন শিক্ষণ, শিক্ষার্থীশূন্য স্কুল, বাড়ছে মাদ্রাসা-কোচিংয়ে ভিড়

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা বিরাজ করছে। কাগজ-কলমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শিক্ষকদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি এবং দায়িত্বহীনতার কারণে প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে বহু শিক্ষার্থী, যার ফলে কমছে স্বাক্ষরতার হার। স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকদের এমন চরম উদাসীনতার কারণেই তারা সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে মাদ্রাসা বা কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করাচ্ছেন।

উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলে যমুনা নদী বেষ্টিত ৫টি ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম কার্যত থমকে আছে। যমুনার দুর্গম চরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত শিক্ষকের উপস্থিতি না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এর ফলস্বরূপ, এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমছে এবং শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী প্রাথমিকেই ঝরে যাচ্ছে।

উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। যেমন, পূর্ব হরিণধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাতা-কলমে ১০৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও শ্রেণীকক্ষ কার্যত শিক্ষার্থী শূন্য।

শিক্ষার্থীর অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যখন ধুঁকছে, ঠিক তখনই কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপবৃত্তির আওতায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা শ্রেণীকক্ষে ফিরছে না। শিক্ষার্থী ফেরাতে মা সমাবেশসহ নানান কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও বিদ্যালয়গুলোতে এর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। অভিভাবকদের মূল অভিযোগ— প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়া এবং শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি না থাকা।

এ ব্যাপারে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী কমার কারণ হিসেবে বিদ্যালয়ের খাদ্য সহায়তা (ফিডিং) কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং করোনা কালীন সময়ে দীর্ঘ বিরতিকে দায়ী করছেন। তারা অভিভাবকের সচেতনতার অভাব ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসায় অমনোযোগী হওয়াকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যমুনার চর অঞ্চলের শিক্ষকেরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই মূল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দায়ী করছেন।

বিদ্যালয়গুলোর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন ‘কালবেলা’কে জানান, উপজেলায় মোট ১৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬টি ক্লাস্টারে বিভক্ত, যার জন্য ক্লাস্টার রয়েছেন মাত্র ৪ জন। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করা কষ্টসাধ্য। তারপরও তিনি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ফেরানোর চেষ্টা চলমান রয়েছে বলে জানান।

শিক্ষার মান উন্নয়নসহ বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা উপজেলাবাসীর।

বাংলাদেশ সময়: ২২:০৮:০৬   ৯ বার পঠিত