![]()
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ শেখ হাসিনাকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় এনসিপির বাংলামোটর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এক মাসের মধ্যে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। আগামী মাসের মধ্যে রায় কার্যকর না হলে জনগণ, শহীদদের পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে যাবে।
এনসিপির পক্ষ থেকে নাহিদ ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শহীদদের পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানান।
তিনি দিনটিকে ঐতিহাসিক আখ্যায়িত করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে তার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন এবং আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই।
নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময়কার সংগ্রামের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, যেদিন আমার ভাই আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছিল, সেদিনই আমরা তার হত্যার বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, হাজার হাজার জুলাই শহীদ এবং আহত যোদ্ধার ওপর সংঘটিত নৃশংসতার বিচার আজ আমরা পেয়েছি।
তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগ গুম, হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটাধিকার হরণ এবং পিলখানা, শাপলা চত্বরে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতা চালিয়েছে ।
নাহিদ জোর দিয়ে বলেন, রায়টি ঐতিহাসিক হলেও এটি কার্যকর হলেই কেবল পূর্ণ সন্তুষ্টি আসবে।
শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনা এবং অনতিবিলম্বে সাজা কার্যকর নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি, ভারত সফরের পর নিরাপত্তা উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন।
নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনা গণহত্যার পেছনের সর্বোচ্চ কমান্ডার এবং পরিকল্পনাকারী ছিলেন। কেবল একজন ব্যক্তি হিসেবেই নয়, দলীয় নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও।
তিনি আরো বলেন, অতএব, আওয়ামী লীগ একটি দল হিসেবেও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। আমরা দলের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে আপিল করব এবং এর রাজনৈতিক ও বিচারিক পরিণতি বাংলাদেশে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
নাহিদ সব রাজনৈতিক দল, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। ন্যায়বিচারের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাজা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, তিনিও একই অপরাধে অভিযুক্ত। আমরা তার পাঁচ বছরের সাজায় সন্তুষ্ট নই।
একজন রাজসাক্ষী হিসেবে তার শাস্তি আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল এবং আপিল বিভাগ এটি পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর অধীনেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই তথ্য যাচাই করেছে।
অতএব, মৃত্যুদণ্ড যথাযথ হয়েছে এবং বিলম্ব না করে এটি কার্যকর করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এই রায় কেবল বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসকদের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল আমিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৫৭ ১৩ বার পঠিত