![]()
কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ৫ আগস্ট আমরা একটা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছি। তবে সমাজ থেকে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। এই ফ্যাসিবাদের নানা রূপ আছে। এর মধ্যে রয়েছে– সেক্যুলার ফ্যাসিজম এবং তার পাল্টা মুদ্রার অপর পিঠ হচ্ছে ধর্মীয় ফ্যাসিজম। ধর্মের নামে অপরের অধিকার হরণ করা, অপরকে হত্যা করা, হত্যার ঘোষণা দেওয়া, অত্যাচার-নির্যাতন করা এসব ধর্মীয় ফ্যাসিজম। যারা দাবি করেন তাদের ধর্মের ব্যাখ্যাটাই আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে, তাদের আমরা সাবধান করে দিতে চাই যে, ৫ আগস্টের পরিণতি খেয়াল করুন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাউলদের ওপর ধারাবাহিক হামলা এবং বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিচারগানের আসরে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সাধুগুরু ও ওলি-আউলিয়া আশেকান পরিষদ’ ও ‘ভাববৈঠকী’ যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
ফরহাদ মজহার বলেন, যারা এই অত্যন্ত তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকে এত বড় জটিলতা তৈরি করেছে, তাদেরও শেখ হাসিনার মতো বিদায় দেওয়া হবে। আবুল সরকারকে যখন গোয়েন্দারা ধরেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে টেলিফোন করেন। আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘কেন আপনাকে গ্রেপ্তার করছে?’ তিনি বলেন, ‘তারা একটা ক্লিপ দেখিয়ে বলতেছে, আমাকে লোকজন ওখানে এসে পিটিয়ে হত্যা করবে।’ আমি গোয়েন্দাদের সঙ্গে সঙ্গে বলেছি, ‘আপনি তাঁকে রক্ষা করেছেন। এটা খুবই ভালো। আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনাদের অনুরোধ করব যে, এখানে কোনো মামলা হয় না। এটা একটা নাটক। পালা মানে নাটক। কবিয়ালরা জনগণকে বোঝার জন্য বিভিন্নভাবে তারা নাটক করে। ধর্মতত্ত্বের মধ্যে যে দর্শনের কথা থাকে, যে গভীর মর্মবাণী থাকে, সেই কথাটাকে কোরআনের মধ্যে, হাদিসের মধ্যে যেভাবে থাকে, সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে বোঝানোর জন্য তারা নাটক করে কথাগুলো হাজির করে। এটাকে বলে পালাগান। অনেকে বলে কাতান গান। অনেকে বলে তর্কগান। অনেকে বলে কবিয়াল গান। এটা আমাদের দেশে হাজার বছর থেকে চলছে নতুন কিছু না।
নাম উল্লেখ না করে একটি গোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে আপনারা কোথায় ছিলেন? তখন তো শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছেন আপনারাই। আগামী নির্বাচন ঘিরে ধর্মকে ভোটের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ইসলামের কার্ড বেচে ভোট নেবেন– এটা ঠিক হবে না। এই কার্ড ব্যবহার করা মানে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো।
এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, অতীতে শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল, অথচ তখন এখনকার সমালোচকরা নীরব ছিলেন। একজন বাউলশিল্পী আপনার ইমান কেড়ে নিতে পারে? ইমান এত দুর্বল কেন? আমাকে হত্যা করলে যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়, তবুও আমি প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক মহলও এ বিষয়ে প্রশ্ন করছে।
অনুষ্ঠানে আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, আমরা যারা গান-বাজনা করি, বাউল গান করি, আমাদের আশ্রয়স্থল সেটা হলো ওলি-আউলিয়ার দরবার। এখন যদি আমাদের সেই অবস্থানটাই ভেঙে ফেলে, তাহলে আমরা তো পথের কাঙালের চেয়েও কাঙাল হয়ে যাব। যারা গানবাজনা ও মাজারকে পছন্দ করে না, আমরা তাদের চোখে পড়ে গেছি। আমরা শত্রু হয়ে গেছি। আমরা তো তাদের মাথায় বাড়ি দেইনি। তাদের কাছে বলিনি যে, আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দাও। আমরা তো তাদের দুয়ারে দাঁড়াইনি। তাদের কাছে কোনো ধরনের বিরক্ত করিনি। তারপরও কেন তারা আমাদের এভাবে কষ্ট দিচ্ছে?
তিনি বলেন, যেখানে-সেখানে বাউল দেখলে আঘাত করে। এখন স্লোগান দেয় ‘একটা একটা বাউল ধর, ধরে ধরে জবাই কর’। এই স্লোগান রাষ্ট্রবিরোধী। সরকারকে তারা মানছে না। কোন অপরাধের জন্য কাকে আসামি করা হবে, তার জন্য আইন আছে। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবি-টুপি মাথায় দেওয়া একটা ১২ বছরের ছেলেকে এই নিম্নমানের স্লোগান কে শিখিয়ে দিয়েছে?
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউলশিল্পীরা বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৩:৩৭ ৪ বার পঠিত