
সৌদি আরবে এবার তীব্র শীত পড়েছে। এর সঙ্গে ভারি বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি দেখা দিয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেটিওরোলজি (এনসিএম) জানায়, শীত মৌসুমে সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি। খবর গাল্ফ নিউজের।
এনসিএম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিবেদনে ১৯৮৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত শীতকালীন (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও তুষারপাতের প্রবণতা বিশ্লেষণ করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, আল-জউফ অঞ্চলের কুরাইয়্যাত শহরে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তাপমাত্রা নেমেছিল মাইনাস ৯ ডিগ্রিতে। নর্দার্ন বর্ডারস অঞ্চলের তুরাইফে একাধিকবার মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। আল-জউফ শহরে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা নেমেছিল মাইনাস ৭ ডিগ্রিতে।
এছাড়া গবেষণা সময়কালে দেশের বিভিন্ন শহরে শূন্যের নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। এর মধ্যে আরার শহরে মাইনাস ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি, রাফহায় মাইনাস ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি, রিয়াদে মাইনাস ৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি, বুরাইদায় মাইনাস ৫ ডিগ্রি, কাসিমে মাইনাস ৪ দশমিক ২ ডিগ্রি, তাবুকে মাইনাস ৪ ডিগ্রি, আল-আহসায় মাইনাস ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, ওয়াদি আল-দাওয়াসিরে মাইনাস ২ ডিগ্রি, তায়েফে মাইনাস ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং বিশায় মাইনাস ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এনসিএম জানিয়েছে, ২০০৮ সাল ছিল রেকর্ডভিত্তিক সবচেয়ে শীতল বছরগুলোর একটি, যখন একাধিক শহরে ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়। প্রতিবেদনে ১৯৮৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুষারপাত বা ফ্রস্ট ডে থাকা শহরগুলোর তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তুরাইফ-৭২০ দিন। এরপর কুরাইয়্যাত (৫৮৮ দিন), হাইল (৩৩৯ দিন), আরার (২৭৭ দিন), রাফহা (১৯৭ দিন), সাকাকা (১৮৫ দিন), তাবুক (১৩৯ দিন), বুরাইদাহ (৮৩ দিন), আল-কাইসুমাহ (৭১ দিন) এবং রিয়াদ (৪৬ দিন)। এনসিএম জানায়, এই তথ্যগুলো দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু গবেষণায় সহায়ক, ঐতিহাসিক প্রবণতা নথিভুক্ত করে এবং সৌদি আরবের বৈচিত্র্যময় জলবায়ু সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
এদিকে সাম্প্রতিক আবহাওয়া পূর্বাভাসে এনসিএম জানিয়েছে, জিজান, আসির, আল-বাহা, মক্কা, রিয়াদ, কাসিম, পূর্বাঞ্চল, নর্দার্ন বর্ডারস ও আল-জউফ অঞ্চলে বজ ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মদিনা ও হাইল অঞ্চলের কিছু অংশে কুয়াশাও দেখা দিতে পারে।
লোহিত সাগরে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বাতাসের গতি ১৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এবং দক্ষিণাঞ্চলে ১২ থেকে ৩২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হতে পারে। ঢেউয়ের উচ্চতা ০ দশমিক ৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত এবং সাগরের অবস্থা মাঝারি থাকবে। আরব উপসাগরে দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পূর্ব দিকের বাতাস ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টাবেগে বইতে পারে, যা বিকালে ১৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং বৃষ্টিবাহী মেঘের সঙ্গে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
উত্তর সীমান্ত অঞ্চলে শীতকাল পরিবেশভিত্তিক পর্যটন বা ইকো-ট্যুরিজমকে নতুন গতি দিচ্ছে। বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় উপত্যকা, সমভূমি ও উদ্ভিদজগৎ নতুন করে সজীব হয়ে উঠছে, যা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য তৈরি করছে। হাইকিং, ক্যাম্পিং ও প্রাকৃতিক ঘটনাবলি উপভোগ করতে ভিড় করছেন পর্যটকরা। ফলে শীতকাল এই অঞ্চলে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমে পরিণত হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
এরই মধ্যে হাইল অঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল ও গ্রামে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকায় খাল ও জলধারা উপচে পড়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতেও সেখানে আরও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৯:৪১ ৮ বার পঠিত