গর্ত থেকে মুক্তি মিললো সেই কাদেরের

প্রথম পাতা » খুলনা » গর্ত থেকে মুক্তি মিললো সেই কাদেরের
শনিবার, ৩ আগস্ট ২০১৯



---

‘৪ বছর গর্তে আটকে থাকা কাদেরের রহস্যময় গল্প’ শিরোনামে গতকাল শুক্রবার নিউজটুনারায়ণগঞ্জ ডটকম অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর মানসিক প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদেরকে তার বাড়ির পাশে নির্জন বাগানের গর্ত থেকে শিকলবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বিকালে খেশরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই মো. ইসমাইল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

তালা থানার ওসি মো. মেহেদী রাসেল বলেন, খবরটি দেখা মাত্রই তিনি খেশরা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জকে শিকলে বন্দি আব্দুল কাদেরকে উদ্ধারপূর্বক হাসপাতালে ভতির নির্দেশ দেন। এমনকি নিজ দায়িত্বে তাকে খুমেকে পাঠানোর ব্যবস্থাও তিনি করেন। তার সু-চিকিত্সায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, আব্দুল কাদের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়স প্রায় ৫৩ বছর। বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর গ্রামে। পাইকগাছার রাড়ুলি আর.কে.বি.কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর একই কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় আকস্মিক মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তালা উপজেলার শাহাজাতপুর গ্রামের শওকত আলী মোড়লের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে এম এম আব্দুল কাদের সবার বড়। একসময় পারিবারিক সচ্ছলতা ভালো না থাকলেও শওকতের বিদ্যানুরাগী মনোভাব সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করে। তবে ভাগ্য বিড়ম্বিত আব্দুল কাদেরকে আর এগুতে দেয়নি নির্মম নিয়তি। জমি-জমা সংক্রান্ত একটি পারিবারিক বিরোধ আকস্মিক থমকে দেয় তার গতিময় জীবন। যার জের ধরে তারই এক চাচাতো ভাই তাকে হত্যার উদ্দেশে তাল কাঠের রুল দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। এতে সে প্রাণে বেঁচে গেলেও চরমভাবে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার। এরপর সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিত্সায় সেবারের মত প্রাণে বেঁচে গেলেও আর ভাল হয়ে ওঠেননি আব্দুল কাদের। বন্ধ হয়ে যায় তার পড়া-লেখা। এরপর কিছু দিন অন্তর অন্তর আকস্মিক মাথায় গণ্ডগোল, স্থানীয় চিকিত্সায় আবার ভাল হয়ে ওঠা। এলাকাবাসীর পরামর্শে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত আসে হয়তো দাম্পত্য জীবনে মস্তিষ্কের সফলতা অসতে পারে। বিয়েও দেয়া হয় তাছলিমা নামে এক মেয়ের সাথে। দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ফাতেমার জন্ম হয়। তবে মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর তাছলিমার মৃত্যু ঘটে। নিঃসঙ্গতায় ফের পাগলপ্রায় অবস্থা হয় তার। এরপর ফের তাকে জুলেখা নামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। নতুন করে দাম্পত্য জীবনে তাদের দু’কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার একজন আসমা খাতুন ও অপরজন ফাইম খাতুন।

আব্দুর কাদেরর দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও সুখের হয়নি। ছোট মেয়ে ফাইমার জন্মের পরেই একেবারেই বিগড়ে যান কাদের। স্বজনদের ধরে মারপিট, ভাঙচুর ও প্রতিবেশীদের ক্ষতিসাধন শুরু করতে থাকেন। প্রতিদিন বাড়তে থাকে তার পাগলামি। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে তাকে প্রথমে বারান্দায় হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শুরু করেন। তবে, সারাক্ষণ উচ্চস্বরে চিত্কার ও অশ্লীল বাক্যবাণে বিরক্ত হয়ে পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে বাগানের মধ্যে গাছে বেঁধে রাখা শুরু করেন। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে এখন তার ঠাঁই হয়েছে বাড়ির পাশের বাগানের মধ্যে অন্ধকার গর্তে। রাত-দিন ঝড়-বৃষ্টিতে এক হাত ও পায়ে শিকলে বাঁধা পড়েছে তার গদ্যময় নিঃসঙ্গ জীবন। সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-সাধ আটকে গেছে আঁঁটসাঁট একটি গর্ত ও তার উপর পড়ে থাকা একটি ছোট মেহগনি গাছের উপর। এভাবেই গত প্রায় চারটি বছর অন্ধকার গর্তেই নিঃসঙ্গতায় কাটে তার জীবন। দৈনিক ইত্তেফাক

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৬:৫৪   ১৩০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

খুলনা’র আরও খবর


সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
মাগুরায় হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার ৩
সাতক্ষীরায় সীমান্তে ১৪৮টি আংটিসহ একজন আটক
খুলনায় হত‌্যা মামলায় একজনের ফাঁসির আদেশ
খুলনা-মংলা ব্রডগেজ লাইনের ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন
যশোর মণিরামপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
নড়াইলে সাংসদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
ভারতে পাচারকালে ২২ বাংলাদেশি উদ্ধার, গ্রেফতার ১
সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাত করায় কর কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত
সরকারি সম্পত্তি সুষ্ঠু নজরদারিতে ভূমি ডাটা ব্যাংক ব্যবহার করা হবে- ভূমিমন্ত্রী

আর্কাইভ