নিউজ২নারায়ণগঞ্জ :
চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠলে কিংবা চালের দর হতদরিদ্রদের নাগালের বাইরে চলে গেলে তা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, আমনের ভরা মৌসুমে বাজারে চাল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এর দর আগের জায়গায় ফেরেনি। ফলে চড়া দরে চাল কিনতে গিয়ে হতদরিদ্র মানুষ এখনো হিমশিম খাচ্ছে।
অথচ এমন পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল না দিয়ে শুধু আটা বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্য মতে, ঢাকা মহানগর ও শ্রমঘন এলাকা ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের ৩৮৬টি কেন্দ্রে দৈনিক এক মেট্রিক টন করে আটা বিক্রি করা হবে। ডিলাররা সরকারের কাছ থেকে ১৬ টাকা দরে আটা কিনে তা ভোক্তাপর্যায়ে কেজিপ্রতি ১৭ টাকায় বিক্রি করবে।
প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, যখন চাল কিনতে হতদরিদ্ররা হিমশিম খাচ্ছে- এমন অবস্থায় সংশিস্নষ্টদের আমলে নিতে হবে, খোলাবাজারে চাল বিক্রি না করে শুধু আটা বিক্রির উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে। বলা দরকার, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, চালের দাম স্থিতিশীল থাকায় ওএমএসে শুধু আটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ভিন্ন কোনো কারণে গড় মৌসুমে বাজারে চালের দর হতদরিদ্রদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে চাহিদা অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হবে- এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগেই নেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন সংশিস্নষ্টরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মাঠপর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গত বছরের শুরু থেকেই সরকারি গুদামে চালের মজুদ তলানিতে।
মিয়ানমার ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি করেও মজুদ স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়নি। এমনকি গত বোরো মৌসুমে সরকার কাক্সিক্ষত মজুদ টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। আর চলতি আমন মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান সফল হওয়া নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ফলে এমনটি জানা যাচ্ছে যে, এ অবস্থায় ওএমএসে চাল বিক্রি করে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না সরকার।
আমরা মনে করি, ওএমএসে চাল বিক্রি না করা এবং চাল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও হতদরিদ্রদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা সাপেক্ষে সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বলা দরকার, ওএমএসে যে আটা বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছে- যা খতিয়ে দেখার বিকল্প নেই।
কেননা খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি বেসরকারি মিলের মালিক-কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি গুদাম থেকে যে গম সরবরাহ করা হয়েছে তা অনেকটা পোকায় খাওয়া এবং এতে বিজাতীয় পদার্থের (ধুলা-বালি, কণা) হার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি।
তাই এই গম ভাঙানোর পর দেখতেও ততটা ভালো দেখা যাচ্ছে না। ফলে এ অবস্থায় এ আটা ওএমএসের ক্রেতাদের কতটা টানবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এমনকি জানা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্টরা সন্দিহান যে, সংকটকালীন সময় সরকার আদৌ বাজার সামাল দিতে পারবে কিনা। কেননা কৃষকরা হাটে নতুন আমন ধান বিক্রি করলেও তা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের খাতায় জমা হচ্ছে। তারা মিলারদের সঙ্গে আগাম চুক্তি করে কিনে নিয়ে নিজস্ব গুদামে মজুদ করছে।
সর্বোপরি সরকার সংশ্লিষ্টদের বলতে চাই, বিভিন্ন সময়েই চালের বাজার অস্থির হওয়াসহ নানা ধরনের চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। এবার যখন জানা যাচ্ছে, চালের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও হতদরিদ্ররা তা ক্রয়ে হিমশিম খাচ্ছে- আবার অন্যদিকে ওএমএসে চাল না দিয়ে শুধু আটা বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে; তখন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশিস্নষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩২:২৮ ৩৫৯ বার পঠিত