১০ রোহিঙ্গার হত্যার খবরেই আটক রয়টার্সের সাংবাদিক

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ১০ রোহিঙ্গার হত্যার খবরেই আটক রয়টার্সের সাংবাদিক
শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮



---মিয়ানমারে গণহত্যার ওপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে আটক করে রাখা হয়েছে। খবর বিবিসির।

এই দুজন সাংবাদিক অনুসন্ধান করে দেখেছেন বর্মী সৈন্যরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে কিভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এ রকম একটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট বা সরকারি গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে সাংবাদিক ওয়া লোন (৩১) ও কিয়াও সো ওও (২৭)-কে গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থাটি বলছে, এই দুজন সাংবাদিক গত বছর রাখাইন রাজ্যে ১০ জনকে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেছেন।

রয়টার্স বলছে, তাদের সাংবাদিকরা জনস্বার্থে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

সংবাদ সংস্থাটির প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে এডলার বলেছেন, ‘তাদেরকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন আমরা প্রথমে তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেছি। কিন্তু তাদের আইনগত অবস্থা দেখার পর ওয়া লোন ও কিয়াও সো এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ইন দিন গ্রামে কী ঘটেছিলো তার বিবরণ প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘বিশ্বব্যাপী জনস্বার্থে আমরা এখন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি’- বলেন তিনি।

কথিত এই গণহত্যার ঘটনা বিবিসির পক্ষে আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই এলাকায় সাংবাদিকদের যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যখন রাখাইনে একের পর এক এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিচ্ছে তখনই রয়টার্স এ ধরনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের কারণে সম্প্রতি সেখান থেকে প্রায় ছ’লাখ মানুষে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের এই অভিযান সশস্ত্র রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ সময় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের ব্যাপারে কী জানা গেছে?

বলা হচ্ছে, এই গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিলো গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় ইন দিন গ্রামে।

রয়টার্স বলছে, এই গ্রামে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়ে তাদের সাংবাদিকরা সেখানে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছিল। সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল বৌদ্ধ গ্রামবাসী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং ফটোগ্রাফারদের। সবার বক্তব্য মিলিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করছিল সেখানে আসলেই কী ঘটেছে।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ওই গ্রামে অভিযানের সময় রোহিঙ্গা পুরুষদের একটি দল নিজেদের জীবন বাঁচাতে একটি জায়গায় গিয়ে জড়ো হয়।

তখন ওই গ্রামের কয়েকজন বৌদ্ধ পুরুষ একটি কবর খনন করার নির্দেশ দেন। তারপর ওই ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হত্যা করা হয়। বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা অন্তত দুজনকে কুপিয়ে এবং বাকিদেরকে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে।

বার্তা সংস্থাটি বলছে, এই প্রথম এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ হিসেবে ছবি পাওয়া গেছে যাতে সৈন্যরা অভিযুক্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রয়টার্স বলছে যে এ বিষয়ে তারা বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যও সংগ্রহ করেছে।

এই দুজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার পর এই ঘটনার ব্যাপারে বর্মী সামরিক বাহিনী নিজেরাও তদন্ত করেছে। তদন্তের ফলাফলের সঙ্গে ওই দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানে মিল রয়েছে বলে রয়টার্স দাবি করছে।

সামরিক বাহিনী নিহত ওই ১০ জনকে উল্লেখ করেছে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে এবং তারা বলছে যে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে কারণ পুলিশ স্টেশনে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার কারণে তাদেরকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

কিন্তু রয়টার্স বলছে, তাদের দুজন সাংবাদিক অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন ওই ১০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক ছিল না। এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ভিড়ের ভেতর থেকে এই ১০ জনকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, তাদের দুজন সাংবাদিক ইন দিন গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে গ্রামবাসী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং নিহতদের আত্মীয় স্বজনও রয়েছেন যারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন।

রয়টার্স বলছে, এক ব্যক্তি ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা কথাও স্বীকার করেছেন।

ওপরের ১০ জনকে হত্যা করার পরের ছবি

এই সাংবাদিকদের কি হয়েছে?

ওয়া লোন ও কিয়াও সো দুজনই বর্মী সাংবাদিক। শক্তিশালী রিপোর্টিং-এর জন্যে তারা সুপরিচিত। গত ১২ ডিসেম্বর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তাদের কাছে রাখাইন রাজ্য ও নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

‘বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে সরবরাহ করার জন্যে তারা অবৈধভাবে এগুলো সংগ্রহ করেছে’- বলছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের আটকের পর থেকেই বলা হচ্ছিল যে খুবই স্পর্শকাতর এক বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল।

এই পরিস্থিতিতে রয়টার্স তাদের সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মিয়ানমার সরকার কি বলছে?

রয়টার্সের এই অনুসন্ধানের ব্যাপারে বিবিসি বর্মী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সরকারের একজন মুখপাত্র জো তে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কথা আমরা অস্বীকার করছি না।’

‘এই অভিযোগের বিষয়ে জোরালো কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার সেটি তদন্ত করে দেখবে।’

‘তখন যদি আমরা দেখি যে অভিযোগ সত্য এবং সেখানে এ রকম ঘটনা ঘটেছে তখন আমরা বর্তমান আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো’- বলেন তিনি।

তবে রাখাইনে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সমাজকে বুঝতে হবে কারা প্রথম সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এ রকমের কোনো সন্ত্রাসী হামলা যদি ইউরোপের কোনো দেশে চালানো হতো, যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা লন্ডনে, নিউইয়র্ক অথবা ওয়াশিংটনে তখন সংবাদ মাধ্যমে কি বলা হতো?’ মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের প্রশ্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩:০৬   ২৬১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ