বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো জঙ্গি, বনদস্যু-জলদস্যুর ঠাঁই হবে না- তাদের সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রেবাবার বাগেরহাট স্বাধীনতা উদ্যানে তিনটি বনদস্যু দলের ২৭ সদস্যের আত্মসর্মপণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন।
বনদস্যুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সুন্দরবনে কাউকে দস্যুতা করতে দেব না। শুধু সুন্দরবনই নয়, দেশের কোথাও কোনো দস্যুতা করতে দেয়া হবে না।
এখনও যারা সুন্দরবনে দস্যুতা তথা বিপথগামী রয়েছেন তাদের দস্যুতা ছেড়ে আসার আহবান জানান মন্ত্রী।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যে-ই প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। এবারই প্রথম এ কাজে র্যাব নিয়োজিত থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। সমাজে যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তারা যদি এই কাজ বন্ধ না করে, তবে তাদের পরিণাম কি তা অচিরেই দেখতে পাবেন।
মাদক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হবে। মন্ত্রী সুন্দরবনের বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের কাজে সহযোগিতার জন্য যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি মোহসিনুল হাকিমের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ২০টি বাহিনীর ২১৭ সদস্য এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে। ৫৪৫ বনদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া ১৩০ বনদস্যু বিভিন্ন সময়ে বন্দুকযুদ্ধে বা গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। মোট কথা সুন্দরবন থেকে ৮৯২ বনদস্যুকে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি।
এই কৃতিত্ব শুধু আমাদের নয়, এই কৃতিত্ব এই এলাকার জেলে-বাওয়ালিদেরও। সুন্দরবনের বনদস্যুদের সমস্যা ৪০ বছরের। আমরা চাই শিগগিরই সুন্দরবনকে সম্পূর্ণ দস্যুমুক্ত করতে।
তিনি সুন্দরবনে দস্যুতার কাজে এখনও সক্রিয় ছোট, সাহেবআলী ও সাত্তার বাহিনীর উদ্দেশ্যে দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন আমরা দোকান খুলে নিয়ে বসে থাকব না। তারা যদি আত্মসমর্পণ না করে তাদের গ্রেফতার বা নির্মূল করার সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই বছরের মধ্যে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে চাই।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুরা যেন হেনস্তা না হয়। তাদের নানা কর্মের মাধ্যমে পুনর্বাসন কাজে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
আইনি সহযোগিতাসহ অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্রের কাজে তারাও ভূমিকা রাখতে পারে সে সহযোগিতা করতে হবে।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র্যাব ৬-এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাগেরহাট ৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, মহিলা সংসদ সদস্য হ্যাপী বড়াল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, খুলনা অঞ্চলের বিজিবি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেক আল মামুন, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, র্যাব-৮ এর অধিনায়ক হাসান ইমন আল রাজীব, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়। আত্মসমর্পণকারী বনদস্যুদের মধ্যে আত্মসমালোচনা করে সরকারের কাছে আইনি সহায়তাসহ সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বনদস্যু ডন বাহিনীর প্রধান মেহেদী হাসান ডন ও আলম ফিডার।
আত্মসর্মপণ অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের কুখ্যাত বনদস্য ডন, ছোট জাহাঙ্গীর ও সুমন বাহিনীর ২৭ বনদস্যু ২৮টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০৮১ রাউন্ড গুলি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে তুলে দেয়।
এর আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ১৬ জানুয়ারি র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণকারী বড় ভাই বাহিনী ও সুমন বাহিনীর ৩৮ সদস্যের প্রত্যেকের হাতে ২০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান এবং মোবাইল তুলে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৩:০২ ৬১৯ বার পঠিত