
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও অনেক করদাতা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর পাওনা পরিশোধ করছেন না। এসব করদাতার ব্যাংক হিসাব থেকে পাওনার সমপরিমাণ অর্থ কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে এনবিআর থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন কর সার্কেল থেকে ব্যাংকে পাঠানো নোটিশে করদাতার নাম ও তাঁর ঠিকানা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গত করবর্ষে করদাতার আয়, ব্যয় ও সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখে কর পরিশোধ সঠিক হিসাবে হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। মিথ্যা তথ্যে পাওনার চেয়ে কম কর পরিশোধ করেছেন। এ পরিমাণ কর পরিশোধে করদাতার কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু করদাতা পাওনা কর পরিশোধ না করায় পাওনার সঙ্গে জরিমানাও পরিশোধ করতে হবে।
নোটিশে করদাতাকে করখেলাপি উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, পাওনার সমান অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত থাকলে অথবা পাওনার সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা হওয়া মাত্র অথবা খেলাপকারীর অর্থ বৈধভাবে ব্যাংকের অধিকারে আসা মাত্র এনবিআরের কোষাগারে জমা করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। ব্যাংক থেকে এনবিআরের কোষাগারে অর্থ জমা হওয়ার পর ওই অর্থ পাওনা রাজস্ব হিসাবে গণ্য করা হবে।
নোটিশে ব্যাংক হিসাব ছাড়াও করদাতার ও করদাতার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে সব রকম সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, লোন হিসাব, বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডসহ অন্যান্য হিসাব থেকেও পাওনা রাজস্ব কেটে এনবিআরের কোষাগারে জমা করার কথা বলা হয়েছে।
এনবিআরের তদন্তে দেখা গিয়েছে, গত করবর্ষে অনেক করদাতা আয়কর রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হিসাবের চেয়ে কম কর পরিশোধ করেছে। এনবিআর থেকে খতিয়ে দেখে এসব করদাতাকে পাওনা রাজস্বের পরিমাণ উল্লেখ করে পরিশোধে নোটিশ পাঠানো হয়। অনেক করদাতা এই নোটিশ আমলে আনেননি। তাঁরা পাওনা পরিশোধ করেননি। এতে পাওনা রাজস্ব আদায়ে এনবিআর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কর প্রদানে সক্ষম করদাতাদের অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হিসাবের চেয়ে কম রাজস্ব পরিশোধ করে সরকারকে নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে, যা রাজস্ব আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে এনবিআরের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘রিটার্ন খতিয়ে দেখে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ হিসাব করে করদাতার কাছ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আদায় করতে হবে। এতে অন্যরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কম রাজস্ব পরিশোধের ধারা থেকে সরে আসবেন।’
বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে এক হাজারের বেশি করদাতাকে বকেয়া পরিশোধে একাধিকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বারবার বলা সত্ত্বেও এসব করদাতার মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক করদাতা গত প্রায় এক বছর থেকে একটি টাকাও বকেয়া পরিশোধ করেননি। এসব করদাতার অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট এনবিআরের ৬৩ নম্বর সার্কেলের উপকর কমিশনার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একজন করদাতার পাওনা আদায়ে পাঠানো হয়েছে। এ করদাতা দেশের একটি নামিদামি করপোরেট হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ করদাতা ব্যাংক এশিয়ায় ব্যাংক হিসাব খুলে তাঁর বেতন গ্রহণ করেন এবং এ ব্যাংকেই তাঁর সঞ্চয় গচ্ছিত রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট করদাতার গত করবর্ষে এনবিআরে জমা দেওয়া আয়কর রিটার্ন খতিয়ে দেখে হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে। করদাতার কাছে জরিমানাসহ এক লাখ ৭৫ হাজার ৭৮১ টাকা পাওনা বলে দাবি করেছে এনবিআর। এ করদাতার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
গত ১ জুলাই থেকে চলতি করবর্ষের আয়কর পরিশোধ করে রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। প্রতিবছরের মতো এবারেও নিয়মিত রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। এই সময়ের পরেও রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার বরাবর আবেদন করে বিলম্বে রিটার্ন দাখিলের অনুমতি নিতে হবে। রিটার্নে করদাতার আয়-ব্যয় ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের প্রকৃত হিসাব উল্লেখ করতে হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাওনা রাজস্বের চেয়ে কম পরিশোধ করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২০:৩৮ ৯৫ বার পঠিত